Friday 17 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ’

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৭ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩১

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাপার বিশেষ সম্মেলন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। বক্ততা করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ, বেনের গ্লোবাল সমন্বয়কারি অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা সহ-সভাপতি ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম ও খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদারসহ আরও অনেকে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাজার অর্থনীতির কারণে জমির অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে। যে কারণে নদ-নদী, জলাভূমি ও বনভূমি দখল করে আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এক্ষেত্রে কালোটাকার প্রভাবও দায়ি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় ইতোমধ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে, বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রেহমান সোবহান বলেন, নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন প্লার্টফর্মে থেকে আন্দোলন করছে। ফলে দেশে অনেক যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক আইন থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুফল পেতে চাইলে সকলকে একই মঞ্চে আনতে হবে। এরমাধ্যমে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি সহজ হবে।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানী সমস্যা সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোন স্বপ্নই পুরণ হয়নি। বরং ওই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। আমাদের পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে এমন প্রকল্প থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।’

ধারণাপত্রে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত ২৫ বছরের কাজের মধ্য দিয়ে বাপা ও বেন দেশের পরিবেশের সমস্যা সম্পর্কে এক বিপুল জ্ঞানভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের আর কোনো সংস্থার কাছে, কিংবা সরকারের কাছে এ দেশের পরিবেশের সমস্যাবলী সম্পর্কে এরূপ তথ্য, বিশ্লেষণ এবং সুপারিশের সম্ভার আছে কিনা সন্দেহ। এসব গ্রন্থ এখন বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উৎস্য হিসেবে কাজ করছে। তবে বাপাকে এখনো উজানে নৌকা বাইতে হচ্ছে। স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিবেশ রক্ষামূলক কাজের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে। তাই এই কাজে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও সারাদেশে কার্যকর পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। সারাদেশে স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা নিয়ে ভূক্তভোগী জনগণ আন্দোলন করছেন। যাদের অনেকের কাছে আমরা পৌছাতে পারেনি। অনেকে এখনো বাপার খোঁজ রাখে না। তাদের কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে।’

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কর্মঅধিবেশন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদ-নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ, ও দৃষ্টিদূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়। শনিবার দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ন’, পঞ্চম অধিবেশনে ‘জ্বালানী, বিদ্যুৎ, ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ষষ্ঠ অধিবেশনে ‘বন, পাহাড়, উপকূল, ও আদিবাসী অধিকার’ নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হবে।

শনিবার বিকেল ৫টায় সমাপনী অধিবেশনে তুলে ধরা হবে। সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সম্মেলনে দেশি-বিদেশী পরিবেশ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাদের মূল্যবান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সারাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা পরিবেশ সমস্যার সমাধানে মতামত তুলে ধরেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমপি

অতি মুনাফা বাজার অর্থনীতি

বিজ্ঞাপন

আকিফের তোপে রংপুরের আটে আট
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪১

অভয়নগরে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর