ঘোষণাপত্রে ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্বীকৃতি চায় ১২ দল
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫১ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫১
ঢাকা: জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্বীকৃতি চায় ১২ দলীয় জোট। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) পুরানা পল্টনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ১২ জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ দিন নয়, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগের স্বীকৃতি দিতে হবে। একই সঙ্গে গনঅভ্যুত্থানের ‘প্রোক্লেমেশন’ নয়, গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটা ‘ডিক্লারেশন’ বা ‘ঘোষণা’ আসতে পারে বলে মনে করে ১২ দলীয় জোট।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেনো সামনে আনা হল, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয়। তবে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এহসানুল হুদা বলেন, ‘ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বলা বাহুল্য যে ‘প্রোক্লেমেশন’ বা ঘোষণাপত্রে সংবিধান স্থগিত করার কথা থাকে। তখন সামরিক ফরমান বা ‘প্রোক্লেমেশন’ (ঘোষণাপত্র) দিয়ে সংবিধান স্থগিত করা হয়। এই ঘোষণাপত্রের অধীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা রাষ্ট্রপতি সংবিধানের যেকোনো ধারা বা ধারার অংশবিশেষ সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজন করতে পারেন। তখন সংবিধান কার্যকর থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রশ্নে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, ১২ দলীয় জোটসহ বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ‘প্রোক্লেমেশন’ নয়, এটা নিয়ে একটা ‘ডিক্লারেশন’ বা ‘ঘোষণা’ আসতে পারে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে। এই সরকার সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছে।’
এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমরা মনে করি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিগত ১৬ বছর যাবত রাজপথের সব আন্দোলন, গুম-খুন হত্যা নির্যাতন, জেল-জুলুমসহ অত্যাচারের বিষয়গুলো নিয়ে একটা রাজনৈতিক বয়ান জাতির সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে ধুম্রজাল ও অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। যারা দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত ফ্যাসিবাদ শক্তি অপসারণের জন্য মরণপণ আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম তাদের প্রতি উপেক্ষা ও উদাসীনতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বিগত সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা এখন পর্যন্ত মিথ্যা মামলা থেকে আব্যাহতি পাচ্ছে না।’
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আজকের সর্বদলীয় বৈঠকের ব্যাপারে ১২ দলীয় জোট কোনো বার্তা পায়নি। আন্দোলনের অনেক অংশীজনও আজকের সর্বদলীয় বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়নি। যেহেতু বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ আমরা আশা করেছিলাম সরকার আন্দোলনের সব অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানাবেন। এক্ষেত্রে আমার চরম আশাহত হয়েছি। আজকে ফরেন একাডেমিতে বৈঠকের নামে একটা নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। এই বৈঠক কার স্বার্থে।’
এক প্রশ্নের জবাবে জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আজও আমাদের ঐক্য অটুট রয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনসহ নানা জায়গায় জটিলতা তৈরি করার পাঁয়তারা করছে। শুধু ঘোষণাপত্র নয়, ১৬ বছরের আন্দোলনের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সর্তক থাকতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘৩৬ দিনের আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়নি। গত ১৫ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। তাই সরকারকে ঐক্য দৃঢ় রাখতে হলে আরও সর্তক থাকতে। ভবিষ্যতে সব অংশীজনদের নিয়ে সরকারকে বৈঠক করতে হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/এসআর