ধান উৎপাদন বাড়াতে সিলেট বিভাগে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩২ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৫
ঢাকা: সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে সিলেট বিভাগে ৫১ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় মোট জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩১ হেক্টর যেখানে নীট সেচযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ হেক্টর। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ৪ লাখ২৯ হাজার ৩১১ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং আরও ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে ১৫ হাজার ৩৩৯ হেক্টর ও ভূ-গর্ভস্থ পানির মাধ্যমে ১ হাজার ৬৮০ হেক্টরসহ মোট ১ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে ৫১ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাল, নালা,পাহাড়ী ছড়া পুনঃখনন ও সংস্কার, সেচযন্ত্র স্থাপন, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে ৫১ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এ জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ ভাগ গ্রামে বাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। দেশের মোট ভূমির পরিমাণ নির্দিষ্ট হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার বসতভিটা নির্মাণ ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে প্রতিবছর কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি জমির পরিমাণ মোট ভূমির ৭০ দশমিক ২ শতাংশ। মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ ১২.৫ শতক। প্রতিবছর শূণ্য দশমিক ৫৬ শতাংশ হারে কৃষি জমি অকৃষি জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, এতে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে ধান উৎপাদন কমছে। এ হারে জমি কমতে থাকলে আগামী ৫০ বছরে কৃষি জমির পরিমাণ আরও ১৫ শতাংশ কমে যাবে। জমির পরিমাণ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবে ফসল উৎপাদন কমে যাবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা, লবনাক্ততা, খরা, অতি বৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব তো আছেই। এ অবস্থায় দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশে উচ্চ ফলনশীল (এইচওয়াইভি) জাতের ফসল উৎপাদন অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান- যা সেচ ছাড়া উৎপাদন অসম্ভব। অন্যান্য ফসল ও সবজী উৎপাদনের জন্যও পানি অপরিহার্য। তাই আমাদের একটি আধুনিক এবং টেকসই সেচ ব্যবস্থাপনা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রেক্ষিতে খাল, নালা, পাহাড়ি ছড়া পুনঃখনন ও সংস্কার, সেচযন্ত্র স্থাপন, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক সেচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস