Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘৭৮ দিন রিমান্ডে রাখলেও খালেদা জিয়া-তারেকের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেননি বাবর’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:০৩ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১১

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: গ্রেফতারের পর ৭৮ দিন রিমান্ডে রেখে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য চাপ দিলেও লুৎফুজ্জামান বাবর তাতে রাজি হননি বলে জানিয়েছেন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ লুৎফুজ্জামান বাবরকে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে খালাস দেন।

বিজ্ঞাপন

এদিন রায়ে বাবর ছাড়া অন্য যে চার জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, ইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমীন।

আর এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান ও চোরাকারবারী হাফিজুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজি আবদুস সোবহান মারা যাওয়ায় তাদের আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এ মামলায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১৪ আসামিকে যাবজ্জীবন এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এ রায়ের ফলে বাবরের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

বিজ্ঞাপন

আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান।

রায়র পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবরকে এভাবেও চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় তিনি যেন বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেন। তবে তাকে আসামি করা হবে না, সাক্ষী করা হবে। কিন্ত ৭৮ দিন রিমান্ডে থাকার পরও তিনি এ ধরনের জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। বাবর আমাকে বলেছেন, তাকে (বাবর) আসামি করার পেছনে এটাই ছিল মূল কারণ।’

এদিন রায় ঘোষণার সময় বাবরের দুই ছেলে আহনাফ ইবনে জামান ও লাবিব ইবনে জামান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে রায় ঘোষণার পর তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। যদিও রায় ঘোষণার পর বাবরের লোকজনদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তাকে নিয়ে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো লুৎফুজ্জামান বাবর দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। তিনি সরকারের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। আজকের রায়ের ফলে বাবরের জেল থেকে মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।’

বাবরের দুই ছেলে আহনাফ ইবনে জামান ও লাবিব ইবনে জামান আদালতে

বাবরের দুই ছেলে আহনাফ ইবনে জামান ও লাবিব ইবনে জামান আদালতে

যেসব গ্রাউন্ডে খালাস পেলেন বাবর

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বাবরের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। যথা- উনার (বাবর) কথায় পাঁচজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর বাবরের প্রভাব বিস্তার করে তাদের ছেঁড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, তিনি (বাবর) এ মামলায় তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছিলেন। তৎকালীন সচিবের নেতৃত্বে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।’

এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো- যে পাঁচজনকে বাবরের প্রভাবে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল, তারা সবাই কারাগারে ছিলেন। আরও বলা হয়, উনার প্রভাবে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাক্ষীরা আদালতে পরস্পর বিপরীতধর্মী বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের একজন জানেন, আরেকজন জানেন না। তারা তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। ফলে বিপরীতধর্মী রিপোর্ট আদালত আমলে নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বাবরের প্রভাবে পাঁচজনকে জেলে নেওয়া হয়েছিল, এ কথারও কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নাই। এ জন্যই তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

বাবর জেল থেকে বলেছেন, তাকে এভাবে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার প্রধান কারণ হলো- তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত একজন মন্ত্রী ছিলেন। বাবর জেল থেকে বলেছেন, তিনি খুব অ্যাকটিভ মন্ত্রী ছিলেন, সব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এজন্যই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে অনেক বেশি কাছে এবং কাজ করার ক্ষেত্রে নির্ভর করতেন। এই নির্ভরতার কারণে তার জীবনে দুর্যোগ নেমে এসেছিল। আমরা আশা করব-তিনি এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। আবার দেশের জন্য অবদান রাখার সুযোগ পাবেন তিনি।

শিশির মনির বলেন, ‘আদালত আজকেই একটি অ্যাডভান্স (সংক্ষিপ্ত) আদেশ দিবেন। আশা করছি আজকেই এই আদেশ বাস্তবায়ন হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। বাবর বর্তমানে কেরাণীগঞ্জ কারাগারে আছেন। আদালতের আদেশ যথাসময়ে পৌঁছার পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।’

তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।

এর আগে, সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছিলেন বাবর। বিএনপির এই নেতার দুর্নীতি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের (দুই মামলা) মামলায় কারাদণ্ড হয়েছিল।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৮ মে আটক হন। সেই থেকে কারাবন্দী তিনি। এর পর বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়। যার মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড, একটিতে যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে।

এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় আট বছরের দণ্ড থেকে এবং ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে খালাস পান তিনি। সবশেষ ১৮ ডিসেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ এনে দু’টি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন।

এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় একই আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয়।

অস্ত্র আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন আসামিরা। আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

খালেদা জিয়া জবানবন্দি তারেক রহমান রিমান্ড লুৎফুজ্জামান বাবর

বিজ্ঞাপন

সাবেক আইজি এম আজিজুল হক আর নেই
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১০

আরো

সম্পর্কিত খবর