Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘১৫ বছরে যা হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচন নয়’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪২ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৩

স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভা

মানিকগঞ্জ: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচন নয়। সেসব নির্বাচনকে দেখে কেউ যদি কল্পনা করেন তাহলে কিন্তু তা অন্য জিনিস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভোটাদেরও দায়িত্ব আছে। ভোটারদের দায়িত্ব হচ্ছে একজন শিক্ষিত ও ভালো মানুষকে নির্বাচনে দাঁড়াতে সাহায্য করা, প্রচার-প্রচারণায় সাহায্য করা এবং ভোট দেওয়া।’

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সিঙ্গাইর উপজেলায় স্থানীয় সরকার সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভালো প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, নির্বাচনের খরচ এবং পেশিশক্তির প্রভাব। এগুলো সহজে মুক্ত করার উপায় নেই। কারণ হচ্ছে, সমাজ-সংস্কৃতি এগুলোকে পছন্দ করছে, চাঁদাবাজিকে প্রচ্ছন্নভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে সবারই ভূমিকা আছে।’

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। যেদেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়ে যান, চেয়ারম্যান-মেম্বার পালিয়ে যান, এটা কোন দেশ! আপনি, আমি সেই দেশের বাসিন্দা। আমরা কোন দেশে দাঁড়িয়ে আছি তা বুঝতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু এভাবে সব অংশে পালিয়ে যাওয়ার নজির নেই।’

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভালো নির্বাচন অনেকগুলো সমস্যা সমাধান নিয়ে আসবে। ভালো নির্বাচন জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে হতে হবে। কারণ, গণতন্ত্রের ভিত্তিটা নিচে। সেই ভিত্তির ওপর জাতীয় গণতন্ত্র নির্ভর করেন। স্থানীয় নির্বাচন ভালো হলে জাতীয় নির্বাচন ধীরে ধীরে ভালো হবে। এখন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ কোনোটিই নেই। আমরা শূন্যতার মধ্যে আছি।’

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের এক রকম নির্বাচন হয়। একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য হয়। কিন্তু উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের মিল নেই। উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্ড নেই, ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয় না। একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন ভাইসচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনজনই কেউ কারো কম নয় বলে নিজেরা ভাবেন। আবার জেলা পরিষদ নির্বাচন আরও ভিন্ন। সেখানে খালুরা, মামুরা মিলে ভোট করেন। পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে জেলা পরিষদে বয়স্ক নেতাদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসিয়ে রাখা হয়। ১২ জন সদস্য ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অফিস করেন আর অফিসে হেঁটে যাওয়ার মতো চেয়ারম্যানের শক্তি নেই। এগুলো কী কোনো সিস্টেম হলো! এটাকে একটা সিস্টেমে আনার জন্য দেশের সবাইকে চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসন- দুটি আলাদা সত্ত্বা নয়। উপজেলা পরিষদ যখন থাকে আইনকানুন যা আছে উপজেলা প্রশাসনের বড় একটি অংশ (৭০ থেকে ৮০ ভাগ অংশ) উপজেলা পরিষদের অন্তর্গত। সুতরাং উপজেলা পরিষদ প্রশাসন বলাটাই শ্রেয়। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দুটি সত্ত্বা রয়েছে। একটি হলো তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকের কাছে দায়বদ্ধ এবং অপরটি হচ্ছে পরিষদের ওপর ন্যস্ত কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা পরিষদের ১৭টি কার্যক্রম তার মাধ্যমে হবে।’

উপস্থিত রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনে প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেধে দেওয়া যাবে না। কারণ, আমাদের দেশের সংবিধান তা সমর্থন করে না। তবে শিক্ষিত ও ভালো প্রার্থীকে ভোটারেরা ঠিক করবেন। তারা শিক্ষিত প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন কেউ চাচ্ছে না। সারাদেশে কেউ চায় না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও এটি নিয়ে কাজ করছে।’

সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশ্ন করেন এবং মতামত দেন।

সারাবাংলা/এইচআই

মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর