মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমিতে সেমিনার
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:০৬
ঢাকা: কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করেছিল বাংলা একাডেমি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশের মধুসূদন: পাঠ ও পরিগ্রহণের রূপরেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং কবি ও গবেষক ফয়েজ আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মোহা. নায়েব আলী বলেন, ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার কবিতাচর্চায় বাংলা কবিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। কবিতার মতো তার জীবনও ছিল নতুনতার অভিলাষী। জীবনে ও সাহিত্য প্রথাগত সীমানা সবলভাবে ভেঙেছেন।’
অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ বলেন, ‘প্রশ্ন থেকে যায়, বাংলাদেশ কেন মধুসূদনকে মনে রাখবে? শিল্পজনোচিত কারণে নিশ্চয়ই তাকে মনে রাখতে হবে। যা ছিল না, তা—ই তিনি সৃষ্টি করেছেন অপূর্ববস্তুনির্মাণসক্ষমপ্রজ্ঞায়; শুধু পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ নয়, বাংলাভাষী মানুষের চিন্তা ও সৃজনশীলতার ইতিহাসে মাইকেলের অভিনবত্বকে স্বীকার করে নিয়েই তবে সাহিত্যিক ইতিহাসের পথ—পরিক্রমায় হাঁটতে হবে। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক রাজনীতির তুমুল সংঘাতের উত্তাল সময়পর্বে তার জন্ম ও বিকাশ। ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশিতের দ্বন্দ্ব ও মিলনের অসমাপ্ত আখ্যানে মধুসূদনের প্রাসঙ্গিকতা তাই ফুরায় না। প্রতিরোধের মঞ্চে জাতীয় ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের প্রত্ন—প্রতীক হিসেবে তাকে সসম্মান স্বাগত জানাতেই হয়। দুইশো বছর পর যাকে স্মরণ করা হয়, তিনিই তো প্রশ্নতীতভাবে অমর। মধুসূদন লিখেছেন, ‘সেই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে; অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা তাঁর পূরণ হয়েছে। আমাদের প্রার্থনা, বাংলাদেশের মনোজনিবাসে মধুসূদনের অধিষ্ঠান চিরায়ত হোক।’
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার জন্মের দ্বিশতবর্ষ পেরিয়ে এখনও প্রাসঙ্গিক ও জরুরি। তিনি ঔপনিবেশিক সময় ও সমাজের অভিজ্ঞতার ভেতরে বাস করে জাতীয়তাবাদী মুক্তির রূপকল্প যেমন আবিষ্কার করেছেন, তেমনি দেশকালের গণ্ডি অতিক্রম করে সর্বমানবিক পৃথিবীর স্বপ্নও দেখেছেন।
তারা বলেন, বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের অবদান মৌলিক এবং ঐতিহাসিক। তিনি প্রথাসিদ্ধ বাংলা কাব্যে নতুন ভোর এনেছেন, বাংলা নাটক সৃদ্ধ হয়েছে তার জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায়। মধুসূদন নারীমুক্তির যেমন অন্যতম দিশারী তেমনি তৃণমূলের মানুষের অজেয় উত্থানপ্রত্যাশী কবি-বিপ্লবী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘মাইকেল মধুসূদন দত্তকে তার অতুলনীয় প্রতিভা ও সৃষ্টি দিয়ে বিচারের সঙ্গে সঙ্গে তার যাপিত সময় ও সমাজকেও মাথায় রাখতে হবে। মধুসূদনকে নিয়ে তৈরি মিথ তাকে বুঝতে সহায়ক নয় বরং ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি করে। কবিতায় নানামাত্রিক কাজ মধুসূদনে কেবল রূপরীতির নিরীক্ষা নয়, বরং বিষয়-নির্বাচনেও সাহসের স্বাক্ষর। নাটক ও রসরচনার ক্ষেত্রেও তা সমান সত্য।’
তিনি বলেন, ‘জন্মের দ্বিশতবর্ষ পেরিয়ে মধুসূদন-পাঠের নতুন নতুন পরিসর তৈরি হচ্ছে এবং আরও হবে। বাংলাদেশে মধুসূদন-চর্চার বিষয়কেও এই প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় রাখা জরুরি।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মাহবুবা রহমান।
সারাবাংলা/পিটিএম