Tuesday 14 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজস্ব ঘাটতি ৪২০০০ কোটি টাকা
নতুন শুল্ক-ভ্যাটেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৩৯

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাজস্ব আহরণের গতি স্লথ হয়েছে। কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া ও ব্যবসা বাণিজ্যে গতি না ফেরার কারণেও রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, রাজস্ব আহরণের গতি ফেরাতে এবং অন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কারণে সরকার অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে। তবে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধি ও ভ্যাট আরোপের মূল আঘাত আসবে জনগণের ওপর। বরং আরও সময় নিয়ে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করা যেত। এতে যৌক্তিক পরিমাণে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের পথ বের করা যেত বলে ধারণা তাদের।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতির বড় কারণ হলো- অর্থবছরের প্রথম দুই/তিন মাস অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই মূলত প্রথম পাঁচ মাসে বড়ধরনের রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন সেই ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে অপ্রত্যক্ষ করের (ভ্যাট) মাধ্যমে তা আদায় করার চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির চাপ কীভাবে কমানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রত্যক্ষ কর কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এখনো মোট রাজস্বের দুই তৃতীয়াংশ প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে আসছে। সবমিলিয়ে দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব বাড়াতে প্রত্যক্ষ করেই নজর দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের যে বাজেট আসছে, সেখানে প্রত্যক্ষ করে নজর দেওয়া সবচেয়ে ভালো কাজ হবে। স্বল্পমেয়াদে এখন যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, শুল্ক ও ভ্যাট বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের, তাতে ঘাটতি কিছুটা কম হবে। তবে বাজেটের পুরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

সিপিডির সম্মানীয় এই ফেলো বলেন, ‘পাঁচ মাসে যে বড়ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটি হয়তো পূরণ হবে না, তবে ঘাটতি কিছুটা কমবে। আর পুরো অর্থবছর শেষেই বলা যাবে, রাজস্ব কতটা অর্জিত হলো। সবমিলিয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে এনবিআরের নজর দেওয়া উচিত।’

এনবিআর বারবার ভ্যাট বা প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়েই রাজস্ব আদায়ে ঝুঁকছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে অপ্রত্যক্ষ কর (ভ্যাট ও শুল্ক) আদায় সহজ। ফলে স্বল্পমেয়াদে সবসময় এনবিআর এই উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিন্তু প্রত্যক্ষ করেই জোর দেওয়া উচিত। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে অনীহা ছিল রাজনীতির কারণে। কারণ অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর কাছে বড় অংকের অর্থ রয়েছে।’

আয়কর রিটার্ন দাখিলের মেয়াদ বারবার বাড়ানোর উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির ছিল। ফলে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানোর উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। এতে রাজস্ব সংগ্রহ কিছুটা হলেও বাড়বে। তবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া জন্য সবসময় একটি নির্দষ্ট তারিখই নির্ধারিত থাকা উচিত।’

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক যে বাড়িয়েছে, এটি একেবারেই সময় উপযোগী হয়নি। এই মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও তার সঙ্গে জনগণ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। জনগণের জীবন-যাপন ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ার ফলে ব্যবসায়ী বা বিক্রেতারা কিন্তু ক্রেতাদের ওপরই সেই দায় চাপাবে। এতে ভোক্তা বা ক্রেতাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা সৃষ্টি হবে। ফলে মূল আঘাতটা কিন্তু জনগণের ওপরই আসবে।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরাও অনেক ভ্যাট দেয়। ফলে ব্যবসায় বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। এমনতিই এখন ব্যবসার গতি স্লথ। ফলে কর আহরণে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। ফলে এ সময়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো ঠিক হয়নি। হয়তো আইএমএফ’র চাপ রয়েছে। সরকার হয়তো এটি করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আইএমএফ’র সঙ্গে সরকারের আরেকটু টাফ পজিশন নিয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত ছিল। ভ্যাটের একটি কমন রেট হওয়া উচিত সেটি ঠিকাছে; তবে এই মুহূর্তে ১৫ শতাংশ করা ঠিক হয়নি। অর্থবছরের মাঝামাঝি নির্দিষ্ট সময় না দিয়ে, এই কষ্টের সময়ে, এই ইনফ্লেশনের সময়ে এটি না করে আরেকটু সময় নিলে মনে হয় ভালো হতো।’

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণ সবসময় আমাদের একটি দুর্বল জায়গা। প্রায় প্রতিবছরই বাজেটে যে টার্গেট দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারি না। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সবসময় পিছিয়ে থাকি। ফলে ঘাটতি তৈরি হয়। এখন অনেক পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। তবে এরপরেও কতটুকু রাজস্ব বাড়বে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ভ্যাট-ট্যাক্স বেড়ে গেলে ভোগ যদি কমে যায়, তাহলে রাজস্ব আদায়ের নতুন কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ হবে না। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চেষ্টা করা উচিত। এদিকে আবার আইএমএফ’র টার্গেটও আছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ অর্থনীতিতে স্বস্তি আনলেও জনজীবনে ভোগান্তি তৈরি হবে।’

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অর্থবছরের প্রথম দিকে ইকোনমি স্লো থাকে। আবার শুরুতেই দেশে জুলাই অভ্যুত্থান ঘটেছে। এখন সবকিছু যে আগের মতো হবে, তা ঠিক নয়। প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে, পরবর্তী সাত মাসে রাজস্ব আদায় বাড়বে।’

নতুন করে শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খরচ বাড়াতে হলে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। টাকা ছাপিয়ে খরচ বাড়ানোর চেয়ে ট্যাক্স বাড়ানো ভালো। এতে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে। আগের সরকার ব্যয় বাড়াতে গিয়ে টাকা ছাপিয়েছে। বরং কর বাড়ানোই ভালো।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরে মতে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশকিছু নিত্যপণ্যের কর ছাড় দেওয়া হয়। রাজস্ব আদায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে ঘাটতি কিছু বেড়েছে বলে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এ ছাড়া, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবও পড়েছে রাজস্ব আহরণে। উৎপাদন বন্ধ রয়েছে অনেক কারখানার। রাজস্ব আয়ে সেই প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। এনবিআর ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য এমনটিই।

প্রসঙ্গত, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বর্তমান অন্ততবর্তী সরকার সম্প্রতি মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এসব অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় শতাধিক পণ্যে নতুন করে শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। সাধারণত নতুন অর্থবছরে বাজেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ও কর কমানো-বাড়ানো হয়ে থাকে। তবে, জাতীয় সংসদ না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার তার ব্যয় মেটাতে এসব অধ্যাদেশ জারি করেছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দাম বাড়ানো হয়েছে এমন পণ্যের ওপরও নতুন করে শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাংলাদেশে এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরও তুঙ্গে উঠবে। নতুন এই ভ্যাট হারে দেশের জনগণ আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

নতুন এই অধ্যাদেশে কারণে মোবাইল ফোনে কথা বলা, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, রেস্তোরাঁর খাবার, সিগারেট, পোশাক, এলপি গ্যাস, কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। নতুন করে কর বাড়ানোর উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্যাট না কমালে রেস্তোরাঁর মালিকরা দোকান বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইসিটি খাতের ব্যবসায়ী মাঠে নেমেছেন। পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরাও প্রতিবাদে সরব। গ্যাসের মূল্য ও শুল্ক না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। শুল্ক বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেছে সংগঠনটি। মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আরোপিত শুল্ক না কমালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকিও দিয়েছে তারা।

তবে, বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়লেও সাধারণ মানুষের উপরে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রোববার (১২ জানুয়ারি) এক ব্রিফিংয়ে তিনি ওই মন্তব্য করে। প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপির যে অনুপাত হার, এটা ২০২১ সালের পর থেকে খুব নেমে যাচ্ছে। এই বছর পাঁচ মাসে আমাদের ট্যাক্স ঘাটতি রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। আমাদের টার্গেট ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সেটা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার একটু বেশি। বাংলাদেশের গ্রোথের জন্য ট্যাক্সটাকে একটা জায়গায় নিতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

৪২ হাজার কোটি টাকা নতুন শুল্ক-ভ্যাট পূরণ হবে না রাজস্ব ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা

বিজ্ঞাপন

ভালো আছেন খালেদা জিয়া
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৩

আরো

সম্পর্কিত খবর