চিন্ময়ের জন্য আদালতে সংঘাতের মামলায় ৬৩ আইনজীবীর জামিন
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৬ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি ৬৩ জন আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে ৬৩ আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
আলোচিত এ মামলায় আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে শতাধিক আইনজীবী।
শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। জড়িতদের কঠিন ও কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে। শহিদ আলিফের বাবা হত্যা মামলা করেছেন, আর আলিফের ভাই বাদী হয়ে আরেকটি ভাংচুরের মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি হিসেবে থাকা ৬৩ জন আইনজীবীর পক্ষে আমরা জামিনের দরখাস্ত করেছিলাম। আদালত শুনানিতে মামলার চার্জশিট বা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় যে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। যিনি মামলা করেছেন, তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আলামতও মামলায় দিতে পারেননি। আমরা বিষয়গুলো আদালতের কাছে তুলে ধরেছি।’
আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আরেক আইনজীবী নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় মোট ৬৬ জন আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৩ জন আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। বাকি তিনজন অনুপস্থিত থাকায় জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেননি। আদালত সবাইকে এক হাজার টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছেন। আদালত আসামিদের কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনারা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চান কী না। তখন আসামি আইনজীবীররা দু’হাত তুলে বলেছেন- আমরা বিচার চাই। এ সময় ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব আইনজীবীর ঐক্যবদ্ধ থাকার পক্ষে মত দেন।’
জামিন পাওয়া আইনজীবী রুবেল কান্তি পাল সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই খানে আলমের করা মামলায় ৬৬ জন আইনজীবীর মধ্যে ৬৩ জন জামিন পেয়েছেন। এদের মধ্যে আবার দুই জন আইনজীবী পুলিশের করা ভাংচুর মামলারও আসামি ছিলেন। ওই মামলায়ও তারা জামিন পেয়েছেন।
এদিকে জামিন আদেশের পর খুনের শিকার সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে পুরো আদালত প্রাঙ্গন জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব সদস্য আদালত প্রাঙ্গনে মোতায়েন ছিল।
জামিন আদেশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদীর আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাদের জামিন দেয়া হয়েছে, তারাই ছিলেন ঘটনার উসকানিদাতা। বিস্ফোরক আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আসামিদের জামিনের নজির নেই। কিন্তু আজ আদালত এ মামলায় ৬৩ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ধরনের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আকস্মিকভাবে দৃশ্যপটে আসেন ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে আট দফা দাবিতে তিনি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সভা-সমাবেশ শুরু করেন, যাতে বিপুল জনসমাগম হয়।
এর মধ্যে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিনঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। আইনজীবী সমিতি এ হামলার জন্য ইসকন সদস্য ও সমর্থকদের দায়ী করে আসছে।
আইনজীবী খুনের ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আইনজীবী সাইফুলের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে ভাংচুরের অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া হামলা-ভাংচুর, পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদান, ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা দায়ের হয়।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ