বগুড়ায় আলু চাষে রেকর্ড, উৎপাদন ছাড়াবে ১৩৫০০ মেট্রিক টন
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫০
বগুড়া: জেলায় এবার আলু চাষে রেকর্ড হয়েছে। প্রথম দিকে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল। তবে দিন যত যাচ্ছে আলুর দাম নিম্নমুখী হচ্ছে। এতে তাদের মনে কিছুটা হলেও হতাশা কাজ করছে। বগুড়ায় এখন মাঠের পর মাঠ আবাদী জমি জুড়ে আলু চাষীদের ব্যস্ততা। এখন চলছে আগামজাতের আলু উত্তোলন। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি আলু তোলা শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সংরক্ষণযোগ্য আলু উত্তোলন।
চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এতে দেড় লাখ টনের বেশি আলুর ফলন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি অফিস। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু সেটি সাড়ে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এরকম হলে এটিই হবে গত ১০ বছরের মধ্যে জেলায় সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনের রেকর্ড।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও রেকর্ড আলুর ফলন আশা করছে। তবে ফলন বেশি হলেও এবার চাষের উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
গোকুল এলাকার কৃষক আব্দুল করিম সারাবাংলাকে জানান, বেশি লাভের জন্য গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলুর খেতের অবস্থা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশ ভালো। আগাম ফলনের লক্ষ্য নিয়ে আবাদ করলেও একটু দেরি হয়েছে। আর ১০/১২ দিনের মধ্যে আলু তুলবেন। ফলনও বেশ ভালো হবেই বলে ধারণা। তবে আলুর বর্তমান বাজার দর নিম্নমুখী থাকায় তেমন লাভ হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি জানান, এবার বীজ ও সারের দাম বেশি পড়ায় খরচ বেশি হয়েছে। সে তুলনায় আলুর বাজার প্রকার ভেদে ৯৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা মণ। গতবছর এই সময়ে দাম মণপ্রতি অন্তত একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি ছিল। এলাকার সবাই কম বেশি আলু আবাদ করেছেন। উৎপাদনও সবার ভালো হবে। কিন্তু দাম পাওয়া নিয়ে হতাশায় আছেন তারা।
মহাস্থানগড় এলাকার কৃষক রাজ্জাক সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে আলু তুলে বিক্রি করে বেশ ভালো লাভ পেয়েছেন। প্রতিমণ আলু বিক্রি করেছেন ১৪০০ টাকা দরে।
উত্তরের সবচেয়ে বড় হাট মহাস্থান বাজারের ব্যবসায়ী আইনুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আলুর দাম ওঠানামা করছে।’ একই ধরনের কথা জানালেন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা। তিনি বলেন, ‘গতবছর এই সময়ে আলুর দাম কিছুটা বেশি ছিল। এবার প্রতিদিনই বাজার ওঠানামা করছে। বতর্মান বাজারে কৃষকদের বেশি লাভ হবে না। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মূল আলু তোলা থেকে শুরু করে পরের অবস্থার ওপর। এখন চলছে আগামজাতের আলু কেনাবেচা।’
আরেক ব্যবসায়ী জানালেন, বেশি দাম না পেয়ে অনেক কৃষক খেতে অধিক সময় আলু রেখে দিচ্ছেন। ফলে আলুর আকার বড় হবে। এতে উৎপাদন বাড়বে। তখন দাম নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, এবার বগুড়ায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আলু আবাদ হয়েছে প্রায় ২১০০ হেক্টর জমিতে। আগাম লাগানো আলুর অর্ধেক এরই মধ্যে তোলা হয়েছে। সংরক্ষণের জন্য অর্থ্যাৎ বছরব্যাপী রাখার জন্য আলুর মূল উত্তোলন শুরু হবে ১০ ফেব্রুয়ারির পর।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, এবার আলুর খেতের অবস্থা ভালো। প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটা সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বগুড়ায় জেলায় আলুর চাহিদা বীজ আলুসহ প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মোট্রিক টন। বাকি আলু দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মতলবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার বগুড়ায় ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে। আলুর মানও ভালো। তাই উৎপাদনেও রেকর্ড হবে বলে আশা করছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম