Monday 13 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এফডিসি কমপ্লেক্স
৮ বছরে অগ্রগতি ৩৫%, এবার সময়ের সঙ্গে ব্যয় বাড়ানোরও প্রস্তাব

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৩৪

প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বিএফডিসি (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন) প্রকল্পের ৭ বছর ৯ মাসে বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া, আর্থিক অগ্রগতি ৩৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রস্তাবটি নিয়ে ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এখন ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৩৭১ কোটি ৭১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া আরও ২ বছর ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধি অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এতেও শেষ হয় নি কাজ। এখন আবার ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আর ও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন প্রকল্প পরিচালক পদটি শূন্য থাকায় বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরো দেশ লকডাউনের আওতায় পড়ার ফলে প্রকল্প কাজে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। একটি সিনেপ্লেক্সের মধ্যে তিনটি স্ক্রিনের পরিবর্তে দু’টি সিনেপ্লেক্সের মধ্যে পাঁচটি স্ক্রিনসহ ফ্লোর প্ল্যানের ফাংশন পরিবর্তন করা হয়। নতুন ফ্লোর প্ল্যানসহ ভবনের স্থাপত্য নকশা ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পতিত প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে প্রদর্শন করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা দু’টি সুইমিং পুলের প্রোভিশন রেখে আর্কিটেকচারাল চুয়িং ও ডিজাইন সংশোধন করা হয়। বর্তমান দু’টি সুইমিং পুলের পরিবর্তে একটি সুইমিং পুল নির্মাণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত পিআইসি (প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫টি স্ক্রীন সম্বলিত ২টি সিনেপ্লেক্সের পরিবর্তে ৩টি স্ক্রীন সম্বলিত ১টি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে ফ্লোর ফাংশনে পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন হওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিতব্য যন্ত্রপাতির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে এর আগে সংস্থাটির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেছিলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতেই ত্রুটি ছিল। যে দরে কাজ করার চুক্তি ছিল পরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার ব্যয় সমন্বয়ে দাবি জানায়। এতে রাজি না হওয়ায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ঠিকাদার। এটিও প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ।

প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিএফডিসি ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে এক বিল উত্থাপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হওয়ার পর ৭০ এবং ৮০ এর দশকে রেকর্ড সংখ্যক জীবন কাহিনী, মুক্তিযুদ্ধ, শিশুতোষ ও প্রেম কাহিনী ভিত্তিক বহু বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। আমাদের চলচ্চিত্রে শিল্পের এক সময় সোনালী যুগ হিসেবে ছিল। বিএফডিসি ছিল চলচ্চিত্র শুটিং ও পোস্ট-প্রোডাকশন কাজে রমরমা। কালার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হবার পর বিএফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাতারা ছায়াছবি তৈরী করতে সদ্য ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

কিন্তু বর্তমানে চলচিত্রের সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পদচারণা দেখা যাচ্ছে না। ফলে এখানে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বিপুল হারে কমে গেছে। চলচ্চিত্র শিল্পের এমন দুর্দশা কাটানোর পাশাপাশি ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উন্নত মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য নির্মাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সংশোধনী প্রস্তাবে আরো বলা হয়, সময় ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সিনেমা শিল্পে মন্দা অবস্থার কারণে অনেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে গেছে। ফলে ছায়াছবি নির্মাণ কমে গেছে। সেই সঙ্গে অনেকগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র শিল্পের সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিএফডিসিকে আর্থিকভাবে মজবুত করা প্রয়োজন। বিএফডিসির কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পটি নির্মাণের মাধ্যমে এই শিল্পের বিরাজমান মন্দা অবস্থা কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের নতুন যুগ সূচনা করা প্রয়োজন। চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া গৌরবময় দিনগুলো ফিরিয়ে আনা, এ শিল্প থেকে বিমুখী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এবং নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সম্পৃক্ত করার জন্য বিএফডিসি
কমপ্লেক্স প্রকল্পের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হবে।

বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পে বিরাজমান মন্দাবস্থা থেকে গৌরবময় সোনালী অতীতকে ফিরিয়ে আনার জন্য এ শিল্পের বিকাশ, প্রকাশ, সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিতব্য ভবনে নানা রকম কারিগরি ও আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হচ্ছে। এটি আধুনিক ‘গ্রীণ বিল্ডিং কনসেপ্ট এ মডার্ণ আর্কিটেকচারাল ভিউ সম্বলিত মনোমুগ্ধকর ভবন হবে। ভবনটি হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিল রেখে নির্মিত হবে। হাতিরঝিলে প্রতিদিন শত শত লোক বিনোদনের জন্য আসে। উক্ত লোকগুলো বিএফডিসি কমপ্লেক্সে অবস্থিত ফুড কর্ণার, রেস্টুরেন্টে খাবার উপভোগ করতে পারবেন। এখানে থ্রি-ডি থিয়েটার ও সিনেপ্লেক্সগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সুসজ্জিত করা হবে, যেখানে লেজার ডিজিটাল প্রজেক্টর ও ডলবি সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করা হবে। বর্তমানে ঢাকায় বসুন্ধরা সিটিতে এবং যমুনা ফিউচার পার্কে যে ধরনের ডিজিটাল প্রদর্শন সিস্টেম চালু রয়েছে, এর চেয়েও আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে উক্ত ভবনে স্থাপিত সিনেপ্লেক্সে। এতে পূর্ণাঙ্গ থ্রি-ডি থিয়েটার নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে বিনোদনের নতুন দিক উন্মোচিত হবে। ফলে চলচ্চিত্রে দর্শকের মুখ সিনেমা হলমুখী করা সম্ভব হবে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা পুনরায় নতুন সিনেমা তৈরী করতে আগ্রহী হবে, নতুন নতুন চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলা-কুশলী সৃষ্টি হবে। এ শিল্পের প্রাণের সঞ্চার শুরু হবে, ফলে উজ্জীবিত হবে চলচ্চিত্র শিল্প।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

নির্মাণ বিএফডিসি বিএফডিসি কমপ্লেক্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর