বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ
বিঘাপ্রতি ফলন ৯০ মণ, লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৮
চুয়াডাঙ্গা: মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয় হলেও দেশে উদ্ভাবিত বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষে লাভবান হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। পরিকল্পিত উপায়ে পেঁয়াজ চাষ ও সঠিক পরিচর্যার কারণে অধিক উৎপাদনের ফলে বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন পেঁয়াজ চাষীরা। জানা গেছে, এই পেঁয়াজ বিঘাপ্রতি প্রায় ৯০ মণ ফলন হয়েছে। আর চাষীরা প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কৃষকদের মাঝে এই পেঁয়াজ চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উপজেলার হোগলডাঙ্গা, চিৎলা, বয়রা, ভগীরথপুরসহ আশেপাশের গ্রামের চাষীরা এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। চলতি বছর প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে প্রদর্শনীমূলক বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এই পেঁয়াজ চাষে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে পিকেএসএফ এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কৃষি ইউনিট।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১০০ হেক্টর সাধারণ, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২২৯ হেক্টর সাধারণ এবং ৫ হেক্টর বারী-৫, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৩৫ হেক্টর সাধারণ এবং ৫ হেক্টর বারী-৫ ও জীবননগর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর সাধারণ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন চাষীরা।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী ইসমাইল হোসেন সারাবাংলাকে জানান, বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ একটি লাভজনক চাষ। তিনি এই জাতের পেঁয়াজ এক বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। এ চাষে তার খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। এবার এক বিঘায় ৯০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া গেছে। ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার প্রথম পর্যায়ে ১০০ টাকার বেশি কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন তিনি। তবে এখনো যে বাজার দর সে অনুযায়ী তিনি ভালো দাম পাচ্ছেন।
একই উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের চাষী মুকুল মন্ডল সারাবাংলার এই প্রতিনিধিকে জানান, তার পাশের জমিতে গ্রীষ্মকালীন বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে তিনি তার জমিতে এই পেঁয়াজের চাষ করবেন।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষি ইউনিটের কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ জোয়ার্দ্দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ লাভজনক। জুলাই-আগস্ট মাসে যদি বীজতলা তৈরি করে এবং ওই বীজতলার চারা যদি মূল জমিতে সারিবদ্ধভাবে লাগানো যায়, তাহলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহর মধ্যে পেঁয়াজ ওঠানো সম্ভব। এ সময় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে। তাই সঠিকভাবে পেঁয়াজের চাষ করলে কৃষক বেশি লাভবান হবে।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পাশাপাশি দামুড়হুদা উপজেলায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষকদের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছিল। পেঁয়াজের জাত ছিল বারী-৫। এ জাতের পেঁয়াজ চাষ করার জন্য ১২ জন কৃষককে ১২ বিঘা জমির জন্য বীজ ও সার সহায়তা দিয়েছিল। এরই মধ্যে পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। ফলনে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে ৯০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যা এই এলাকার চাহিদা পূরণ করে অন্য এলাকায়ও সরবরাহ করা যাচ্ছে। এতে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।’
অন্যান্য জাতের পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশে উদ্ভাবিত বারী-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষের সম্প্রসারণ করলে চাষীরা লাভবান হবে এবং দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এই পেঁয়াজ চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেন তারা।
সারাবাংলা/পিটিএম