‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’র বিতর্কিত ধারা সংশোধনের দাবি
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৫ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩১
ঢাকা: দেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ আইনের বিতর্কিত ধারা সংশোধন অথবা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ভয়েজ ফর রিফর্ম এবং ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্ক।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক আলেচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিমু নাসের। বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রেজাউল ভূইয়া, গোলাম মাহমুদ জোয়াদ্দার, ইশরাত জাহান, আল আমিন হোসেন, রেজউর রহমান লেলিন প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই কালাকানুন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করবে। এবং তার পরিবর্তে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা এবং নাগরিক অধিকারভিত্তিক একটি জনমুখী, সুচিন্তিত, সুসঙ্গত ও সুশাসনমূলক আইন প্রণয়ন করবে। কিন্ত আমরা দেখলাম, এই আইনটি পরিশোধিত করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে তাতে জনগণের মৌলিক মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চরমভাবে অগ্রাহ্য, ক্ষেত্র বিশেষে খর্ব ও নিতান্ত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তারা বলেন, এই অধ্যাদেশের অন্যতম খারাপ ও আপত্তিকর অংশ হলো ধারা ৩৫ ও ৩৬। যে ধারা অনুযায়ী পুলিশ বিনা পরোয়ানায় যে কারও ফোন, ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিভাইস জব্দ ও তল্লাশি করতে পারে এবং ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। যে বাংলাদেশের পুলিশের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সর্বজনবিদিত, যেখানে জুলাইয়ের পর পুলিশের জবাবদিহিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত ছিল, তা না করে পুলিশের হাতে জন হয়রানির একটু নতুন হাতিয়ার তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরওয়ানা ছাড়া তল্লাশি ও গ্রেফতার কোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না। এটি সরাসরি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তারা আরও বলেন, ধারা ৮-এ বলা হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মনে করে কোনো তথ্য বা উপাত্ত দেশের সংহতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধ ক্ষুন্ন করতে পারে তাহলে তারা মহাপরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে এই তথ্য প্রচার ব্লক করে দিতে পারে। সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এই ধারা অপব্যবহারের পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো ব্যক্তি বা সংবাদমাধ্যম সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুষ্কর্ম তুলে ধরার সাহস করে তাহলে তাকে অনায়াসে এই আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।
বক্তারা বলেন, ধারা ২৫ ও ২৬-এ ব্যক্তিগত হয়রানি, অপমান, ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে, যা অত্যন্ত আপেক্ষিক একটি বিষয়। এই ধারার আওতায় কাউকে হয়রানির উদ্দেশে খুব সহজেই কারও বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব। ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং জবাবদিহীতার সম্মুখীন করতে কার্টুন এবং প্যারোডির ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু গত ১৫ বছর সরকারকে সমালোচনা করে কোনো কার্টুন প্রকাশ করা হলে তার সঙ্গে জড়িতদের দুর্বিষহ অত্যাচার করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মিম, দেয়ালচিত্র এবং কার্টুন ছিল অন্যতম শৈল্পিক হাতিয়ার। অথচ ধারা ২৫-এ আরও বলা হয়েছে, কাউকে হেয় প্রতিপন্ন বা অপমান করার উদ্দেশ্যে তৈরি স্থির চিত্র, ভিডিও, গ্রাফিক্স ইত্যাদি যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই, এমন উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এখানে শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য বলতে কী বুঝানো হচ্ছে তা বলা হয়নি। অপমান বা হেয় করার ব্যাপারটিও সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এর মাধ্যমে শুধু শিল্পীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না, সৃজনশীলতার অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
সর্বোপরি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতির সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করেছে। এই আইনের বেশ কিছু ধারা সেগুলোর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলেও মনে করেন আলোচকরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম