রাষ্ট্র সংস্কারে খেলাফত আন্দোলনের ১৫ প্রস্তাবনা
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৯
ঢাকা: চব্বিশ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে খেলাফত আন্দোলনের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন দলটির সাংগঠকি সম্পাদক মুফতি সুলতান মুহিউদ্দিন।
এসময় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ১৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি। প্রস্তাবনাগুলো হলো:
১. রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি: সংস্কারকে ফলপ্রসূ ও টেকসই করতে হলে ইসলামী মূলনীতির আলোকেই করতে হবে বলে প্রস্তাবনায় তুলে ধরেন মুফতি সুলতান মুহিউদ্দিন।
২. রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নৈতিকতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা: সংবিধান সংশোধন করে কুরআন ও সুন্নাহকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করতে হবে এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
৩.অর্থনৈতিক সংস্কার: রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত, ওশর আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যথাযথ খাতে ব্যয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. সামাজিক ও শিক্ষা সংস্কার : ইসলামি শিক্ষার প্রসার, শিক্ষার সকল স্তরে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্তি স্কুলে ইসলাম ও কুরআন শিক্ষার জন্য কওমী মাদ্রাসা উত্তীর্ণদের নিয়োগ, মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়সহ শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রদত্ত ১৫ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের ইসলামি পোশাক নিরাপদ ও নৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫.আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা, বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতকরণ,আইনের যথাযথ প্রয়োগে বাধাহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬.জাতীয় ঐক্য ও সংহতি: রাষ্ট্রের সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৭.পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক:নিজস্ব সম্মান, মর্যাদা, স্বাধীনতা পরিপূর্ণভাবে বজায় রেখে বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
৮.পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা: পরিবেশ দূষণ রোখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন ও বিদ্যমানগুলোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যত্রতত্র কলকারখানার অনুমোদন না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট এলাকায় কলকারখানা গড়ে তোলার অনুমতি দিতে হবে।
৯.জাতীয় নেতৃত্ব ও নির্বাচন: রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য, দ্বীনদার ও আদর্শ নেতৃত্ব বাছাইয়ের বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন কর্তৃক প্রদত্ত ৪০ দফা প্রস্তাবনার আলোকে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।
১০. বেকার সমস্যা:বেকার সমস্যা সমাধানের লক্ষে বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার, উদ্যোক্তাবান্ধব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ তৈরি, স্টার্টআপ ব্যবসায় উদ্যোগের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, রেজিষ্ট্রেশনসহ আইনি প্রক্রিয়ায় সহজতা আনা ও প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১.বৈদেশিক আমদানি সংকোচন ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি: বিদেশী পণ্যের আমদানী সংকুচিত করে দেশজ শিল্পোৎপাদনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে দেশকে অর্থনীতির উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে হবে।
১২.জাতীয় প্রতিরক্ষা:জাতীয় প্রতিরক্ষা মজবুত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দেশের ১৫ হতে ৪০ বছরের সকল সক্ষম নাগরিককে ইসলামের আলোকে সামরিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
১৩.কৃষি: ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে কৃষি উপকরণ সরবরাহ,কৃষকদের বিনা সুদে ঋণদান ও উৎপন্ন দ্রব্যের ন্যায্য মূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
১৪.পুলিশি ব্যবস্থা:ক্রসফায়ার, গুম, অহেতুক হয়রানি, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার ইত্যাদি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
১৫.জনপ্রশাসন ও আমলাতন্ত্র: জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা আনতে দলীয়করণ বন্ধে আমলাদের চাকুরিতে নেওয়ার আগে এবং অবসরের পরে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা বা হওয়া ও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
মুফতি সুলতান মুহিউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মনে করে, এই ১৫টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন সম্ভব।’
সারাবাংলা/এফএন/এসডব্লিউ