Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভবদহের অভিশাপে কৃষকের চোখেমুখে বিষাদের ছাপ

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৪৫

অভয়নগরের জলাবদ্ধতা। ছবি: সারাবাংলা।

যশোর: যশোরের ভবদহের অভিশাপে অভয়নগরে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে চলতি বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শীত মৌসুমে এমন জলাবদ্ধতায় কৃষকরা হতাশ। ফসল আবাদ করতে না পারায় এখানকার কৃষকদের দুশ্চিন্তা, চোখেমুখে বিষাদের ছাপ।

ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা রোধে সরকারি সেচপ্রকল্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হলেও উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার কিছু অংশ ধান চাষের জন্য উপযোগী হয়ে উঠনি। পানির নিচে তলিয়ে আছে বোরো চাষের জমি। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চান জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে থাকা চাষীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

অভয়নগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারণে এবার ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হচ্ছে না। যার মধ্যে প্রেমবাগ ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, সুন্দলী ইউনিয়নে ৯০০ হেক্টর, চলিশিয়া ইউনিয়নে ৪০০ হেক্টর, পায়রা ইউনিয়নে ৩০০ হেক্টর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় ২০০ হেক্টর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় জমে থাকা পানি কমতে শুরু করেছে। জলাবদ্ধ ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলে এখনও ৭-১০ ইঞ্চি উচ্চতায় পানি রয়েছে। পৌর এলাকার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি বিল ও আবাসিক এলাকায় ৩-৫ ইঞ্চি পরিমাণ পানি জমে আছে।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরখোলা গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এবার ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস কোনো প্রকার সহযোগিতা করছে না। ভবদহের জলাবদ্ধতার অভিশাপ আমাদের মত কৃষককে বিপদের মধ্যে ফেলে রেখেছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে কৃষি কাজ থেকে কৃষক অন্য কাজে চলে যেতে বাধ্য হবে।

বিজ্ঞাপন

চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের কামরুজ্জামান তরফদার বলেন, আমার ৭০ বিঘা কৃষি জমি এখনও জলাবদ্ধ। গত বছরের মাঘ মাসে ঘেরের মধ্যে ধান চাষ করেছি। এবছর জলাবদ্ধতার কারণে বিলের ও ঘেরের মধ্যে ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভবদহ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেলে এক সময় তারা তাদের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাবে। তাই কৃষকদের দাবি জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, জলাবদ্ধ এলাকাগুলো থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তারপরও বোরো ধান চাষে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। কারণ উপজেলা ও পৌর এলাকার প্রায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামীতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তাদের সহযোগিতা করা হবে।

যশোরের একটি বিল হচ্ছে ভবদহ। ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার কারণে যশোর খুলনার অন্তত ১০ লাখ মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যশোরের মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুর এই ৩ উপজেলার ২৭ টি বিলের পানি নিষ্কাশিত হতো ভবদহ এলাকায় টেকা ও হরি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত স্লুইস গেটের সাহায্যে। পলি ভরাট হওয়ায় নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন হয় না। এদিকে, স্লুইসগেটের ২১টি কপাটের ১৮টি বন্ধ। কয়ক বছর ধরে এই অচলাবস্থা চলছে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড আধুনিক ও শক্তিশালী পাম্পের মাধ্যমে বিলের পানি সরানোর চেষ্টা করছে।

এর আগেও নিষ্কাশনের জন্য সরকার বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্প গ্রহণ করলেও ফল পাওয়া যায়নি। জোয়ারে আসা পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম শ্রীহরি ও টেকা নদী। ফলে, প্রতি বছর ভবদহে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

জানাগেছে, যশোর ও খুলনার ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ১০ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার নাম ভবদহ। এ সমস্যা সমাধানের নামে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/এসআর

অভয়নগর বোরো চাষ অনিশ্চিত ভবদহের জলাবদ্ধতা যশোর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর