গ্রিনল্যান্ড কিনতে মরিয়া ট্রাম্প
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৪ | আপডেট: ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩১
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কেনার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তার এই ইচ্ছা প্রথমবার প্রকাশিত হয়েছিল তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়, কিন্তু এবার তিনি এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি তার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফরে গিয়ে এই পরিকল্পনা নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।
গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে ডিসেম্বরে ট্রাম্প বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড কেনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি দাবি করেন, এই দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রিনল্যান্ড দখলে সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ ব্যবহার করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এটি নিশ্চিত করতে পারছি না, তবে বলতে পারি এটি আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল, যার ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদ দুই দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রিনল্যান্ড উত্তর আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে একটি কৌশলগত পয়েন্ট এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, উত্তর-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত পিটুফিক স্পেস বেস যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত কৌশলগত। এটি মস্কো এবং নিউ ইয়র্কের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গ্রিনল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে তেল, গ্যাস এবং বিরল খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই খনিজগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন এবং সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে চীন এই খনিজ উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং প্রয়োজন হলে রফতানি সীমিত করার হুমকি দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প উৎস হতে পারে।
আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার ফলে শিপিং রুটগুলো আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আর্কটিক শিপিং কার্যক্রম ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। বরফ গলার ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন সহজ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চল আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে ডেনমার্কের স্বশাসিত অঞ্চল হলেও স্বাধীনতার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুতে এগেদ ঘোষণা করেছেন যে, ‘আমরা বিক্রির জন্য নই এবং কখনো হবো না। আমাদের স্বাধীনতার লড়াই চলবে।’
ডেনমার্ক এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তাদের সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে এবং গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড কিনতে ট্রাম্প যদি বড় ধরনের আর্থিক প্রস্তাব দেন, তাহলে এটি স্বাধীনতার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ট্রাম্প প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেন, তাহলে এটি গ্রিনল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে। তবে গ্রিনল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কুপিক ক্লেইস্ট বলেছেন, ‘একটি দেশ বা জনগণকে কিনে নেওয়া সম্ভব নয়। এটি অসম্ভব এবং অগ্রহণযোগ্য।’
বর্তমানে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়িত হবে তা এখনো অস্পষ্ট। তবে তার এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
সারাবাংলা/এনজে