Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সচল হতে চায় ‘বিকল’ বিকল্পধারা, যেতে চায় নির্বাচনেও

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৪০ | আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৯

বিকল্পধারা বাংলাদেশ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রায়ত এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত বিকল্পধারা বলতে গেলে বিকল হয়ে আছে। তাদের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। এমনকি ঢাকা বাদে সারাদেশে দলটির নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে বিকল্পধারার কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম না থাকলেও তারা নির্বাচনমুখী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে তারা। সেই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে উজানে চলতে রাজি নয় বিকল্পধারার বর্তমান কর্ণধার সাবেক রাষ্ট্রপতিপুত্র মাহি বি চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা আলোচনার জন্ম দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াত ইস্যুতে সেই ঘোষণা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। আর বি. চৌধুরী ওই সময় গঠন করেন ‘যুক্তফ্রন্ট’। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে সেই জোট অংশ নেয় নির্বাচনে। লক্ষ্মীপুরে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও মুন্সীগঞ্জে মাহী বি চৌধুরী সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। এর পর থেকেই আর বিকল্পধারার তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারার নেতৃত্বে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ন্যাপ ও গণফ্রন্টসগহ অনিবন্ধিত ৩০টি দল নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। এমনকি দলটির অস্তিত্ব কেবল মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিবারের বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ।

দলটির একাধিক সূত্র বলছে, বিকল্পধারা পরিচালিত হয় মাহি বি চৌধুরীর সিদ্ধান্তে। তবে তিনি বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। ফলে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম বৈঠকসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের সব জেলা তো দূরের কথা, ঢাকা ও এর আশপাশের কয়েকটি জেলায় বিকল্পধারার যে কমিটি আছে, সেগুলোও পূর্ণাঙ্গ নয়। আবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কমিটি থাকলেও সেগুলো সচল নয়।

তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনের জন্য ফের সক্রিয় হতে যাচ্ছে দলটি। রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে থাকার অঙ্গীকার করেছে দলটির নেতা মাহি বি চৌধুরী। গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি হঠাৎ করেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করার কথা জানান। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সঙ্গে বিকল্পধারার নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে তার ও বিকল্পধারার ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন মাহি বি চৌধুরী। পরিবর্তন প্রত্যাশী অনেক তরুণ এবং সংস্কারপন্থি নাগরিকরা বিকল্পধারার বলেও দাবি করেন তিনি।

অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার দিন মাহি বি চৌধুরী বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বঙ্গভবনের গেইটে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা তাকে ধাওয়া করে ও জুতা নিক্ষেপ করে।

দলের এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে প্রায়ত রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলে গেছেন, বিকল্পধারাকে কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিকল্পধারার রাজনৈতিক ভাষা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিময় ও সম্মানজনক। বিকল্পধারা হবে অহিংস ও রক্তপাতহীন কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সংগঠন। প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারাকে উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ ও নান্দনিক ধারার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। বিকল্পধারাকে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা এবং নেতৃত্ব দিতে হবে। বিকল্পধারা হবে নিজস্ব উপার্জিত অর্থে পরিচালিত একটি দল। শুধুমাত্র দলীয় সদস্যদের থেকে অনুদান নেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকল্পধারা বিশ্বাস করবে সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। শুধুমাত্র সামষ্টিকভাবে রাষ্ট্রের জনগণ এই ক্ষমতা উপভোগ করবে। সরকার শুধুমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার পেশীশক্তি অথবা ক্ষমতার প্রদর্শন বিকল্পধারায় নিষিদ্ধ থাকবে। দলের যেকোনো পদ বা পর্যায়ে নেতৃত্ব গ্রহণে যোগ্যতার ভিত্তিতে, গণতান্ত্রিক পন্থায় সকল সদস্যের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত থাকতে হবে। বিকল্পধারায় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কোনো সুযোগ থাকতে পারবে না।’ কিন্তু দলীয় আদর্শের জায়গায় এগুলোর কোনো কিছুরই প্রতিফলন নেই বলে জানান তিনি।

অপরদিকে সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী না হওয়ার পাশাপাশি মাহী বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। ব্যাখ্যা দিতে তিন বার তাকে দুদকে হাজিরাও দিতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মত, বিকল্পধারা প্রকৃত অর্থে বিকল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন কোনো আশাও দেখছেন না তারা।

কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডা. বি চৌধুরীর ক্লিন ইমেজের ওপর ভরসা রেখে আমরা এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমই নেই। নির্বাচনের আগে একটু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা ছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, এটা কেবল সংসদীয় আসনে মনোনয়ন নিয়ে দর কষাকষির পাঁয়তারা ছিল। শেষ পর্যন্ত দু’জনের মনোনয়ন পাওয়া গেছে যায়। কিন্তু দুই সংসদ সদস্যেরও কোনো ধরনের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। বরং তারা নিজেদের আখের গুছিয়েই সন্তুষ্ট ছিল।’

দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বিকল্পধারার যাত্রা শুরু হয়েছিল। নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গায় তেমন কোনো সাফল্য না থাকলেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কয়েক বছর বিকল্পধারা ছিল বেশ আলোচিত একটি দল। দেশে সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত ও পরিছন্ন রাজনীতি প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য ছিল— তা আর ধারণ করতে পারছে না বিকল্পধারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দলটি বিকল হয়ে পড়েছে বলে মত তাদের। তাই সুযোগ পেলেই তারা অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন।

উল্লেখ্য, বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবর জিয়ারত করতে না গেলে বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির সংসদীয় দলের সভা। ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বছর দুয়েক বিরতির পর তিনি ২০০৪ সালে গঠন করেন বিকল্পধারা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

নির্বাচন বিকল্পধারা বাংলাদেশ মাহি বি চৌধুরী রাজনীতি

বিজ্ঞাপন

মুম্বাই যাচ্ছেন শাকিব খান
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর