দুদকে অভিযোগ
আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে ডিশ লাইনের কর্মচারী শত কোটি টাকার মালিক
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫২ | আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৯
টাঙ্গাইল: ছিলেন ডিশ লাইনের বিল তোলার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সরকারি দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর রাতারাতি বদলে যায় দৃশ্যপট। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের ফজলু মল্লিক পরিণত হন শত কোটি টাকার মালিকে। স্থানীয়ভাবে ৮০টি ভেকু মেশিনের মালিক হন। মালিক হন ঢাকায় ফ্ল্যাট-প্লটের।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ফজলু মল্লিক এমন আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে ওঠেন। টাঙ্গাইল শহরের সোনিয়া আক্তারসহ পাঁচজন গত ২৯ অক্টোবর ফজলু মল্লিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের৷ (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।
দুদকে দাখিল করা অভিযোগের একটি কপি সারাবাংলার কাছে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাব্বিশা গ্রামের ফায়েজ মল্লিকের ছেলে ফজলু মল্লিক ১৫ বছর আগে ডিশ লাইনের কর্মচারী ছিলেন। বিল তুলতেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, ফজলুর মামাতো ভাই রফিকুল ইসলাম তখন ভূঞাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার মধ্যমে ফজলু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্ত তানভীর হাসান ছোট মনির ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন।
অভিযোগে বলা হয়, এমপি ছোট মনির প্রভাব খাটিয়ে মামতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা রফিকুলকে দিয়ে কৌশলে বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প সাজিয়ে অর্থ আত্মসাতের মিশন শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যক্তির লাইসেন্সে কাজ নিয়ে নামকাওয়াস্তে সেই কাজ নিজেই করেন। এভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের নাম করে হাতিয়ে নেন শত কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিসহ পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফজলু মল্লিককেও আসামি করা হয়েছে।
ফজলু মল্লিকের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে ফজলু ভূঞাপুর উপজেলায় একটি ছয় তলা অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করেছেন। ভূঞাপুরে তৈরি করেছেন একটি গ্যারেজ, যেখানে রয়েছে তার ৮০টি ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র)। চট্টগ্রামেও তার একটি ভেকুর গ্যারেজ রয়েছে। এ ছাড়া ভূঞাপুরে ৯টি, টাঙ্গাইলে চারটি ও ঢাকায় দুটি জমির প্লট রয়েছে তার। টাঙ্গাইলের আদালত পাড়ায় একটি ও ঢাকার বনানীতে একটি ফ্ল্যাটের মালিক ফজলু। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লেকের পাড়া ইউনিয়নের ঝোলা বাড়ি খালের কাছে একটি ইটভাটা রয়েছে তার। এ ছাড়া নিজের নামে সম্পদের তথ্য গোপন রাখতে ভাই, স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামেও গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
অভিযোগকারী সোনিয়া আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফজলু মল্লিক আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় দলের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের একজন ডোনার। তার টাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পৈশাচিকতা চালিয়েছেন। ফজলু নিজেও সাবেক এমপি ছোট মনির সঙ্গে ঢাকার উত্তরায় ছাত্র-আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মসূচিতে অংশ নেন। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, এটাই আমার প্রত্যাশা।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফজলু মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে শুনেছি। এখন দুদক তদন্ত করে দেখুক আমার কী আছে না আছে। আমি ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করি। শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারেন। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। আমার সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
জানতে চাইলে দুদক টাঙ্গাইলের উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘হেড অফিস থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো কাগজপত্র পাইনি। পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমপি