উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:২১ | আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫০
ঢাকা: উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে তিনি লন্ডন হিথ্রো বিমান বন্দরে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি হবেন।
এরইমধ্যে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ উড়োজাহাজ ঢাকায় পৌঁছেছে। সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা-সংবলিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চড়েই লন্ডনে যাবেন খালেদা জিয়া।
এদিকে দলের চেয়ারপারসনের বিদেশযাত্রা উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধরণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমও তার সঙ্গে দেখা করেছেন।
খালেদা জিয়ার যাত্রাপথের রোডম্যাপও প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযাযী, খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজা থেকে গুলশান ২ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত গুলশান ও বনানী থানা বিএনপি, গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত বাড্ডা, ভাটারা ও রামপুরা থানা বিএনপি, বনানী কাঁচাবাজার থেকে কাকলী গোলচত্বর পর্যন্ত হাতিরঝিল, শিল্পকলা ও তেজগাঁও থানা বিএনপির নেতা-কর্মী সমর্থকেরা খালেদা জিয়াকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবেন।
এছাড়া কাকলী গোলচত্বর থেকে আর্মি স্টেডিয়াম ফুটওভার ব্রিজের আগ পর্যন্ত কাফরুল, আদাবর, মোহাম্মদপুর ও শেরে বাংলানগর থানা বিএনপি, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের আগ পর্যন্ত ভাসানটেক, মিরপুর, দারুসসালাম, শাহ আলী ও ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপি, নিকুজ্ঞ পেট্রোলপাম্প থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পল্লবী, রূপনগর, খিলগাঁও, বিমানবন্দর, দক্ষিণখান, উত্তর খান, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম ও তুরাগ থানা বিএনপির নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডন যাচ্ছেন তার চিকিৎসক ও ব্যক্তিগত স্টাফসহ ১৫ জন। এরা হলেন— ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো. সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার।
খালেদা জিয়া ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় যান। ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল কোভিড-১৯ ভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট আসে তার। ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করা হয়। ২৭ এপ্রিল কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
২০২১ সালের ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেন তিনি, দ্বিতীয় ডোজ নেন ১৮ আগস্ট। ২৫ অক্টোবর একটা ছোট অপারেশন করা হয় তার। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি করোনার তৃতীয় ডোজ টিকা নেন। ১১ জুন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মধ্য রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৪ জুন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। ২২ আগস্ট নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতাল যান। ফের অসুস্থ হলে ২৮ আগস্ট এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি হন। ৩১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন।
আরও পড়ুন- খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়
২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতাল যান। ২৯ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। ৪ মে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসেন। এর পর ১৩ জুন ফের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। কিছুদিন চিকিৎসার পর বাসায় ফেরেন। এর পর ফের ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন।
এ বছর ২৫ অক্টোবর আমেরিকার তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিতে। ২৬ অক্টোবর তারা খালেদা জিয়ার অপারেশন করেন। ২৮ অক্টোবর চিকিৎসকরা চলে চান।
২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি ৫ মাস ২ দিন পর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। ৮ ফেব্রুয়ারি আবার হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। ৩১ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হন। ২ এপ্রিল বাসায় ফেরেন। ১ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবারও হাসপাতালে যান খালেদা জিয়া। ২ মে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসেন। ২২ জুন আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। ২ জুলাই বাসায় আসেন। ৮ জুলাই আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান তিনি। ২১ আগস্ট বাসায় ফেরেন। ২১ সেপ্টেম্বর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যান তিনি।
সারাবাংলা/এজেড/এনজে