Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ
আ.লীগ সরকারের কারণে বিচার পাইনি— অভিযোগ পরিবারের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১২

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম। ছবি: সারবাংলা।

কুড়িগ্রাম: আজ ৭ জানুয়ারি। সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৪ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মরদেহ।

সীমান্তে ফেলানী হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ’র বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে।

বিজ্ঞাপন

এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’র’ সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রিট আবেদন করেন ফেলানীর পরিবার। এই হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছরেও সুষ্ঠু বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।

ফেলানীর বাবা-মায়ের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই বিচার পাননি তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সঠিক বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন তারা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের দরিদ্র নুরুল ইসলাম পেটের তাগিদে আর দশজনের মতো পাড়ি জমান ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশে নিজ দেশে আসতে ভারতের কাঁটাতার টপকাতে হবে তাকে।

৭ জানুয়ারি শুক্রবার। ভোর ৬ টায় ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাটাতার টপকায় ফেলানীর বাবা। পরে কাঁটাতার টপকানোর চেষ্টা করে ফেলানী। এসময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয় সে। গুলি বিদ্ধ হয়ে আধাঘণ্টা ধরে ছটফট করে কাঁটাতারেই ঝুলন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এরপর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ঘণ্টা।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ’র এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়।

পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা ভাইরাস শুরুর আগে শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি এখনও। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেলানী হত্যার ১৪ বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত বিচার পাই নাই। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বিচারটা নিয়ে গেলাম, কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শুনলাম শুনানি হবে। তবে কবে হবে এর কোনো তারিখ পাইনি। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে ফেলানী হত্যার বিচার আটকে আছে। আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যাকারীর বিচার মরার আগে দেখে যেতে চাই।’

একই কথা জানান ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘অনেকবার মেয়ে হত্যার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের বিপক্ষে লড়তে চেষ্টা করেনি।’ বর্তমান ইউনূস সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মেয়ে হত্যার বিচার প্রার্থনা করেন তিনি।

স্থানীয়দের দাবি ফেলানী হত্যার বিচার হলে কমতো সীমান্ত হত্যা। তাই দ্রুত বিচার করা দরকার।

কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার রীট তালিকাভূক্ত রয়েছে। সেটি যত দ্রুত শুনানি হবে ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে।

সারাবাংলা/এসআর

কুড়িগ্রাম ফেলানী হত্যা সীমান্ত হত্যা

বিজ্ঞাপন

জীবন থামে সড়কে — এ দায় কার?
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর