Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগ
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সারকোজির বিচার শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৯ | আপডেট: ৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:১১

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি সোমবার (৬ জানুয়ারি) সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অর্থায়ন কেলেঙ্কারির মামলায় বিচারে হাজির হয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসন থেকে তিনি তার ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারের জন্য অবৈধ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন।

তিন মাসব্যাপী চলমান এই বিচার সারকোজি ও গাদ্দাফির মধ্যকার জটিল সম্পর্ক খতিয়ে দেখবে। গাদ্দাফি, যিনি ৪১ বছর ধরে লিবিয়ার একনায়ক হিসেবে শাসন করেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। যদিও সারকোজি এই মামলায় সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

ডানপন্থি এই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আরো ১২ জন, যার মধ্যে তিনজন সাবেক মন্ত্রী রয়েছেন, বিদেশি একনায়কের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই মামলাটি ফ্রান্সের রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি নাগরিকদের আস্থা আরও ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের মতে, মধ্যস্থতাকারীরা প্যারিসের মন্ত্রণালয় ভবনে নগদ অর্থ ভর্তি স্যুটকেস পৌঁছে দিতেন, যা সারকোজির নির্বাচনি প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই অর্থের বিনিময়ে গাদ্দাফি শাসন কূটনৈতিক, আইনি ও বাণিজ্যিক সুবিধা চেয়েছিল কিনা তা আদালত পরীক্ষা করবে।

আরেকটি অভিযোগ হলো গাদ্দাফির গোয়েন্দা প্রধান আবদুল্লাহ সেনুসিকে ঘিরে। সেনুসি ছিলেন ১৯৮৯ সালে নাইজারে একটি ইউটিএ যাত্রীবাহী বিমানে বোমা হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত, যেখানে ১৭০ জন নিহত হয়েছিলেন। এই মামলার ভুক্তভোগীদের পরিবারের আইনজীবী লর হেইনিক বলেছেন, তার মক্কেলরা আদালতে জানাবেন কীভাবে তাদের পরিবার হত্যার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির মুক্তির বিনিময়ে অর্থ গ্রহণের চেষ্টা তাদের মর্মাহত করেছে।

বিজ্ঞাপন

তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, ২০০৫ সালে যখন সারকোজি ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার ঘনিষ্ঠ মহল গাদ্দাফির শাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সারকোজি গাদ্দাফিকে প্যারিসে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানান।

তবে ২০১১ সালে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় গাদ্দাফি সরকারের পতনে ফ্রান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই বছরের অক্টোবরে গাদ্দাফি বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়েন এবং নিহত হন।

যদি দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সারকোজি ১০ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। একই অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী ক্লদ গেয়ান্ত এবং ব্রাইস হর্টেফিউক্সকেও বিচারে হাজির করা হয়েছে। তারা সবাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, ‘সারকোজি লিবিয়ার অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা তার প্রচারাভিযান অর্থায়ন করেছি এবং আমাদের কাছে তার প্রমাণ আছে।’

অ্যান্টি-করাপশন গ্রুপ শেরপা মামলার পক্ষভুক্ত দল হিসেবে আদালতে উপস্থিত থাকবে। তাদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই মামলা দেখাচ্ছে কীভাবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি সাধারণ জনগণের উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষত লিবিয়ার জনগণের ক্ষেত্রে।’

উল্লেখ্য, সারকোজির বিরুদ্ধে এর আগে আরও দুইটি আদালতের রায় এসেছে। তিনি বর্তমানে একটি মামলায় এক বছরের জন্য ইলেকট্রনিক ট্যাগ পরিধান করছেন। অন্য একটি মামলায় তিনি ২০১২ সালের নির্বাচনে অবৈধ ব্যয়ের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তিনি সবগুলো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

সারাবাংলা/এনজে

গাদ্দাফি ফ্রান্স লিবিয়া সারকোজি