Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের ইতিহাস ও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে যা বললেন মেজর ডালিম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৭ | আপডেট: ৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪১

ঢাকা: দীর্ঘ ৫০ বছর আড়ালে থাকার পর প্রকাশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (বীর বিক্রম)। রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টায় প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টকশোতে কথা বলেছেন দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা মেজর শরিফুল হক ডালিম। ‘বিশেষ লাইভে যুক্ত আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ডালিম (বীর বিক্রম)’ শিরোনামে লাইভে যুক্ত হন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা।

এ সময় তিনি সাংবাদিক ইলিয়াসের টকশোতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও নিজের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। রোববার লাইভে এসে ৫০ বছরের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। লাইভে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের নেপথ্যের ইতিহাস তুলে ধরেন। এতে ইলিয়াসের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত টকশোটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। সাক্ষাৎকারটি আট লক্ষাধিক দর্শক একযোগে উপভোগ করেন। ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে জানা গেছে।

আলোচনার শুরুতেই ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আমাদের জাতির সূর্যসন্তান যিনি ২০২৪ সালের আন্দোলন দেখেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতিকে সফলতা এনে দিয়েছিলেন। যে কারণে আপনাকে আমরা মেজর ডালিম হিসেবে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আপনি জাতিকে এড্রেস করতে পারেন।”

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলের লাইভ টকশো থেকে নেওয়া ছবি।

ইলিয়াসের প্রশ্নের জবাবে মেজর ডালিম বলেন, “আজ অনেক বছর পর দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন তাদের আমি অভিনন্দন জানাই। সঙ্গে লাল ছালাম। বিপ্লব সমাজ বা যেকোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাদের বিজয় এখনও পুরোপুরিভাবে অর্জিত হয়নি। তার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।”

বিজ্ঞাপন

“পুরোপুরি অর্জন করার পর তাদের এমন একটি অবস্থানে থাকতে হবে, যেখান থেকে তারা নীতি নির্ধারণ করতে পারবে। তাদের ইচ্ছা, চাহিদা ও প্রত্যাশার সঙ্গে জনগণের চাহিদার মিল রয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব কিন্তু তাদের।”

তিনি বলেন, “আমি এবং আমার সাথী ভাইয়েরা যারা এখনো বেঁচে আছি। আমরা যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবী ছাত্র জনতাদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে কোনো রকম অবদান রাখতে পারি; আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ থেকে তাহলে আমরা সেটা করতে প্রস্তুত।”

তিনি দেশবাসীকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ছাত্র-জনতাকে, যারা আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন, তাদের লাল শুভেচ্ছা জানান।

‘২৪ -এর গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্যের নায়ক ছাত্র-জনতাকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে সেই ‘৭১ -এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।”

মেজর শরিফুল হক ডালিম ও তার স্ত্রী নিম্মি চৌধুরী ডালিম।

৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “খুবই স্পর্শকাতর প্রশ্ন। নিজের বাদ্য নিজে বাজানো যায় না। প্রথম কথা, ১৫ আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করব। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশে কাজ করব। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকেই এর শিকড় বিস্তৃত হয়েছিল। আমরা তখন বুঝেছিলাম, এই যুদ্ধ কি আমাদের স্বার্থে, নাকি অন্য কারও উদ্দেশে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “শেখ মুজিব স্বৈরাচারী শাসন চালু করেছিলেন, যা সাধারণ মানুষকে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠতে বাধ্য করেছিল। তার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানো ছিল সময়ের দাবি।”

তিনি আরও বলেন, “১৫ আগস্ট একটি সামরিক বিপ্লব ছিল। এতে উভয় পক্ষের লোকজন হতাহত হয়। তবে বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর লাখ লাখ মানুষ আনন্দ মিছিল করে, এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনসমর্থন নিয়ে প্রকাশ্যে আসে। এর মাধ্যমে এই সামরিক অভ্যুত্থান জনসমর্থন লাভ করে।”

মেজর ডালিম বলেন, “যখন সাতদফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গর্ভমেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।”

তিনি বলেন, “শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতোটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার জুলুমের অবসানের জন্য।”

মেজর ডালিম বলেন, “মুজিব তো মারা যায়নি, মুজিব একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থান তো আর খালি হাতে মার্বেল খেলা না। ওখানে দুই পক্ষ থেকেই গোলাগুলি হয় এবং হতাহত হয় দুইপক্ষেই। যেমন মুজিবের পক্ষের কিছু লোক মারা গেল সেভাবে সেনা অভ্যুত্থানকারী বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেও কিছু লোক প্রাণ হারান। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়ে গেল, তারা ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিল।”

মেজর শরিফুল হক ডালিম ও তার পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, “মুজিবের মৃত্যুর খবর জানার পর আর বাকশালের পতনের খবর জানার পর শহর বন্দর গ্রামের লাখ লাখ মানুষ আনন্দ মিছিল বের করল। যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতা বা দলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল তারাও জনসমর্থন নিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এভাবেই জনস্বীকৃতি পেয়েছিল ১৫ আগস্টের বৈপ্লবিক সামরিক অভ্যুত্থান।”

টকশোতে ‘২৪- এর বিপ্লবীদের উদ্দেশে মেজর ডালিম বলেন, “বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবীদের, ছাত্র-জনতার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যদি কোনো রকম অবদান রাখতে পারি, আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ থেকে…তাহলে আমরা সেটা করতে প্রস্তুত। পিছপা হবো না, ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধা, সালাম এবং বিপ্লবী সালাম, সাথে মন থেকে দোয়া করছি তাদের বিপ্লব যাতে ব্যর্থ না হয়। তারা যাতে বিজয় অর্জন করে সুখী সমৃদ্ধ শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলো তাদের দুর্জ্যেয় ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।”

তিনি বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবীদের উদ্দেশে বলেন, “তাদের প্রয়োজনে আমি আমার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত। তারা যেন শক্তিশালী, সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে, সেই দোয়া করছি।”

সারাবাংলা/জিএস/ইআ

ইউটিউব চ্যানেল টকশো বাংলাদেশের ইতিহাস মেজর ডালিম সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯

আরো

সম্পর্কিত খবর