গ্যাস চুক্তি নবায়নে কিয়েভের অস্বীকৃতি, বন্ধ রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৪ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৫৫
ইউক্রেনে প্রায় তিন বছর ধরে যুদ্ধ চললেও রাশিয়াকে তার ভূখণ্ড দিয়ে গ্যাস পরিবহনের অনুমতি দিয়েছিল দেশটি এবং বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ট্রানজিট ফি আয় করত। তবে বুধবার (১ জানুয়ারি) পাঁচ বছরের গ্যাস সরবরাহ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিয়েভ তা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় মলডোভার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার প্রায় সব শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কেবল খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে।
প্রধানত রাশিয়ানভাষী প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বাসিন্দার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি ১৯৯০ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় মলডোভার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। বুধবার (১ জানুয়ারি) ইউক্রেনের মাধ্যমে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর অঞ্চলটি তাৎক্ষণিক ও তীব্র সংকটে পড়েছে।
ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী সের্গেই অবোলনিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য উৎপাদনে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া সব শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি কীভাবে উন্নয়ন হবে তা বলা এখনই কঠিন। দীর্ঘ সময়ে এই সমস্যা সমাধান না হলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হওয়ার সক্ষমতা হারাবে।’
ইউরোপের দেশগুলো বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করলেও ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এখনও বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সাথে মস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও গ্যাস সংকট বিদ্যমান সেখানে।
স্থানীয় জ্বালানি কোম্পানি বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে বাড়িগুলোতে গরম পানি ও হিটিং সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে এবং পরিবারগুলোকে এক কক্ষে জড়ো হয়ে জানালায় পর্দা বা কম্বল টাঙিয়ে গরম থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার প্রো-রাশিয়ান নেতা ভাদিম ক্রাসনোসেলস্কি জানিয়েছেন, উত্তরের অংশে ১০ দিন এবং দক্ষিণে ২০ দিনের গ্যাস মজুদ রয়েছে। প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার শুরু করেছে এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
রাশিয়া প্রতি বছর ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় প্রায় ২ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করত, যা মলডোভার বিদ্যুৎ সরবরাহেও ব্যবহৃত হতো।
মলডোভার রাশিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অর্থ পরিশোধ নিয়ে বিরোধে রয়েছে। দেশটি বর্তমানে তার প্রায় ৬০ শতাংশ জ্বালানি রোমানিয়া থেকে আমদানি করে এবং গ্যাস খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমানোর চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার গ্যাস ট্রানজিট বন্ধ হওয়াকে ‘মস্কোর অন্যতম বড় পরাজয়’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপে আরও গ্যাস সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার ইউক্রেন আক্রমণের পর, ইউরোপ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং নরওয়ের মতো উৎস থেকে গ্যাস আমদানি বাড়িয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার দায় সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র, কিয়েভের পুতুল শাসন এবং ইউরোপীয় নেতাদের ওপর যারা তাদের নাগরিকদের কল্যাণ ত্যাগ করে আমেরিকান অর্থনীতির সহায়তায় অর্থ ঢেলেছে।’
সারাবাংলা/এনজে