Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন— সরকারের উদ্দেশে মুজাহিদুল ইসলাম

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৩ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪০

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সারাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলম। বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল বের করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর আমরাও চাই। তবে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য কবর দিতে চাচ্ছেন তারা সাবধান হয়ে যান। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দিইনি।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সবকিছু কলঙ্কিত করেছে। দেশ ও জনগণের কাছে ঘৃণার পাত্র হিসেবে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর বর্তমানে জামায়াতে ইসলামের কর্মকাণ্ড দেখে দেশের জনগণ অবাক হচ্ছে। তাদের তৎপরতা অনেক কিছুর ইঙ্গিত বহন করে।’ সেজন্য স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে সাজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

মুজাহিদ ইসলাম সেলিম বলেন, ‘নৌকা, ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লা- নাগিন বিষ। এই তিনটি দল বাদ দিয়ে অন্যান্য দল নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করুন।’

কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনে অস্থিরতা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। দেশটি গোলকধাঁধার ভেতর আছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ আরও সংকটে পড়বে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা।’

বিজ্ঞাপন

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ঢাকা সমাবেশ উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ। ছবি : সারাবাংলা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ঢাকা সমাবেশ উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ। ছবি : সারাবাংলা

তিনি বলেন, ‘দেশে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশ ও জাতির জন্য এটি শুভ লক্ষণ নয়। এই গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকেও বিতর্কিত করে তুলেছে। এই গোষ্ঠী ৭২ এর সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খেলা করতে চাচ্ছে। তাদের এই খেলা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’ দেশের বিরাজমান সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শাহ আলম।

আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘায়িত ক্ষমতায় দেখতে চাই না। মুক্ত বাজারের মতো দেশ পরিচালনা করছে বর্তমান সরকার।’

তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও একাত্তরের ঘাতক অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ওরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশবাসীকে এই শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অবিচল থেকে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে, নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে আমরা লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনজীবনের সংকট নিরসন, জানমালের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। সংস্কারের কথা শব্দচয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয় সুনির্দিষ্ট করুন। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ দৃশ্যমান করুন।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ঢাকা সমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ঢাকা সমাবেশ। ছবি: সারাবাংলা

দেশের বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হতাশা কাটাতে হবে। ব্যবস্থা বদল ছাড়া মুক্তি নাই। নীতিনিষ্ঠ বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তির বিকল্প সমাবেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা বদল সম্ভব। আসুন, ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের ঐক্য গড়ে তুলি। মানুষকে বিকল্প পথের সন্ধান দিয়ে সচেতন ও সংগঠিত করি।’

প্রিন্স বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে কেউ যেন বিতর্কিত করতে না পারে, আবার নিজেদের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কুক্ষিগত করতে যাতে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য নিজেদের সজাগ থাকতে হবে। সেইসঙ্গে পতিত স্বৈরাচার, লুটেরা, সাম্প্রদায়িক, আধিপত্যবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিকে রুখে দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।’

সমাবেশ থেকে তিনি সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলে- জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে হবে; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে; নিত্যপণ্যের দাম কমাতে হবে; জান-মালের নিরাপত্তা দিতে হবে; জনজীবনের সংকট নিরসন করতে হবে; অবিলম্বে শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরির ন্যায্য দাবিসহ অন্যান্য দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে; কম মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহসহ ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে হবে। সবার কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব দাবিসহ মানুষের মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান রুহিন হোসেন প্রিন্স।

সমাবেশ থেকে জানানো হয়, ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ঐক্য গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ েনওয়া হবে। ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণ ও শপথ গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির লাখো মানুষের সমাবেশে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত হন। ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করা হবে। এ সময়কালে সারাদেশে অন্তত এক হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। সিপিবির কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করবেন। এ ছাড়া সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচিতে সারাদেশে সভা-সমাবেশ, হাটসভা, জনসভা, মানববন্ধন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

টপ নিউজ ঢাকা সমাবেশ সিপিবি

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর