চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১৩ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির নেছার আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, বৃহস্পতিবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তার পক্ষে শুনানি করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ১১ জনের একটি দল শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন।
এদিন চিম্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে শুনানি করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ১১ জনের একটি দল অংশ নেন। দলটিকে নেতৃত্ব দেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।
এছাড়া বাকি ১০ আইনজীবী হলেন- অনুপ কুমার সাহা, শংকর চন্দ্র দাস, মিন্টু চন্দ্র দাস, সব্যসাচী মণ্ডল, দিপ্তীস হালদার, সুমন কুমার রায়, হিন্দোল নন্দী, প্রভাস তন্ত্রী, শেখর চন্দ্র দাস ও রবীন্দ্র নাথ রবিন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চিম্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে শুনানির জন্য আদালতে আসেন সুপ্রীম কোর্টের ওই ১১ আইনজীবী। সকাল সাড়ে ১১টায় শুনানি শুরু হয়। শুনানির সময় আদালত দুপক্ষেরই যুক্তিতর্ক শুনেন। চিম্ময়ের পক্ষের আইনজীবীরা তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন। প্রায়ই ৪০ মিনিট শুনানি শেষে আদালত চিম্ময়ের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। এরপরই চিম্ময়ের আইনজীবীরা একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন। এসময় তাদের উদ্দেশ্য করে কয়েকজনকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। এরপর শতাধিক আইনজীবী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এদিন চিন্ময়ের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতে প্রবেশ মুখেই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গিয়েছে। আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কাউকে আদালত ভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজলাসেও ভেতরেও রাখা হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা।
চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য্য শুনানি শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘ওনার (চিন্ময়) বিরুদ্ধে যে সেকশনগুলো দিয়েছে, সেগুলো প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। যে অভিযোগটি আনা হয়েছে জাতীয় পতাকা অবমাননা, এটা জাতীয় পতাকা ছিল না। তাই আমরা আদালতকে বলেছি, এই মামলা চলতে পারে না। আদালত জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনানিতে আমরা বলেছি, এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। এর সাজা হচ্ছে যাবজ্জীবন। মামলা তদন্তের সময় উনাকে জামিন মঞ্জুর করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। আপত্তির প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত শুনানি শেষে গুণাগুণ বিচার করে উনার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন। আসামি পক্ষের বক্তব্যে হচ্ছে, উনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা সেগুলো সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। যদি আদালতের রায়ে তারা অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তারা জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যাবেন।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্্য চট্টগ্রাম বারেরই একজন আইনজীবী। এখন হাইকোর্টে প্র্যাক্টিস করেন। উনি ওকালতনামা দিয়েই চিম্ময়ের পক্ষে জামিনের আবেদন করেছেন। তার সঙ্গে আরও ১০ আইনজীবী ছিলেন। এর আগে রবীন্দ্র ঘোষ যিনি জামিন শুনানি করতে এসেও ফিরে যেতে হয়েছিল, তিনি মূলত চট্টগ্রাম বারের সদস্য নন। চট্টগ্রাম আদালতে আপনি যখন কোনো মামলা লড়তে যাবেন তখন আপনাকে ওকালতনামা জমা দিতে হবে। কিন্তু তিনি ওকালতনামা দিতে পারেননি।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছিল ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ২৬ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এসময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে দুর্বত্তরা। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ জামিন আবেদনের শুনানি করতে আবেদন করেন গত ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার কাছে ওকালতনামা না থাকায় সেদিনও শুনানি হয়নি।
২৬ জানুয়ারির সংঘর্ষে সেদিন পুলিশের ১০ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি ও আলিফ খুনের ঘটনায় তার বাবা একটি মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত ওসব মামলায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন আলিফ খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত আছেন জানিয়েছে পুলিশ।
সারাবাংলা/আইসি/ইআ