এক-চতুর্থাংশ বইও পৌঁছেনি শিক্ষার্থীদের হাতে, আপাতত ভরসা অনলাইন
২ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১৩ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৮
ঢাকা: যশোরের সরকারি শহিদ স্মরণি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপশহর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়গুলোতে বছরের প্রথম দিনে কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যেত না। শিক্ষক- শিক্ষার্থী ঠাঁসা বিদ্যালয়গুলোতে এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার একসঙ্গে ১০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। স্কুলে যাদের পাওয়া গেছে সেসব শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, এবার তারা নতুন বই পায়নি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪র্থ শ্রেণির তিনটি বই এবং সপ্তম শ্রেণির তিনটি বই এসেছে তাদের কাছে। শুধু যশোরই নয় সারা দেশেই বছরের প্রথম দিন এমন চিত্র ছিল। খোদ রাজধানীর স্কুলগুলোতেও পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত বই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এ পর্যন্ত যে সংখ্যক বই পাঠাতে পেরেছে তা চাহিদার এক চতুর্থাংশের কম। যদিও প্রতিষ্ঠানটি বলছে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সকল বই ছাপিয়ে স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সনও চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে সেখান থেকে পিডিএফ কপি নামিয়ে পড়তে পারেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। এরমধ্যে প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য ছাপা হবে প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা।
এনসিটিবি বলছে, গেল বছরের শেষ দিন পর্যন্ত এরমধ্যে মাত্র ছয় কোটি ৬ লাখ বই ছাপা হয়েছে। যা বছরের প্রথম দিন স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দিতে না পারায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যবই নিয়ে কথা বলেন। পাঠ্যবই ছাপা ও তা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রছাত্রীদের হাতে এখনই সব দিতে পারা গেল না, এ জন্য আমি তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। করোনার বছর ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেওয়া হতো। তবে কোনো কোনো বছর কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয়ও হয়েছে। তবে এবার নতুন বছরের জন্য সমস্যাটি আরও তীব্র হয়েছে। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রুয়ারিতেও সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
যদিও ১ জানুয়ারি বইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় কিছু কিছু শিক্ষার্থী যেন ১ জানুয়ারি বই পায়। তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে চেষ্টা করছি কীভাবে সব বই পৌঁছে দেওয়া যায়।
একই অনুষ্ঠানে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয় কোটি বই গেছে। আরও চার কোটি বই ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায় আছে, বুধবারের মধ্যে হয়তো এগুলো চলে যাবে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের সব বই, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই যাবে। এ লক্ষ্যে তারা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, বছরের মাঝে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে শিক্ষাক্রমও পরিবর্তনের কারণে বই ছাপাতে দেরি হয়েছে। শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াও দেরির কারণ।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের হাতে সময় খুব কম ছিল। এমনকি ডিসেম্বরের শেষ দিকেও প্রিন্টারের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে, যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে যেন বইয়ে থাকে। তারপর আবার উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ, উন্নত মানের মলাটের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনায় এনটিসিবিতে এ বিষয়ে যারা দীর্ঘদিন কাজ করেছে তাদেরকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। যে কারণে বিষয়টি নতুনদের বুঝতে সময় লেগেছে।
এই পরিস্থিতিতে পড়াশুনায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে কি-না বলে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা উড়িয়ে দিয়ে এনসটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, যাতে কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সে জন্যেই অনলাইন ভার্সন। আমরা অনলাইনে সকল বইয়ে পিডিএফ কপি আপলোড করে দিয়েছি। যেন শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বই দেখতে পায়।
১৫ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথমদিনে উৎসব করে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উদ্ভাসিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের মন। দেড় দশকের সেই রীতিতে এবার ভাটা পড়েছে। ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ’ এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে ঘটা করে করে আসা বই উৎসব।
প্রসঙ্গত, নতুন বছরের প্রথম দিন প্রাক প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন প্রকাশ হয়েছে। বইয়ের পিডিএফ কপি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) https://nctb.gov.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। পাওয়া যাবে এই লিংকে- https://nctb.portal.gov.bd/site/page/d01e72b0-8ecd-4c81-bffd-c9e117b7fdad
সারাবাংলা/জেআর/ইআ