প্রাথমিকে মিলছে ৩ শ্রেণির বই, ছাপা হয়নি অষ্টম-নবমের
১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪১ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১০
ঢাকা: গত পনেরো বছর ধরে বছরের প্রথম দিনে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া যেন একটি নিয়মে পরিনত হয়েছিল। এবার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হলো। এই দিনে একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, গেল শিক্ষাবর্ষে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান পাঠ্যবই ছাঁপানোর কারণে এবার বছরের প্রথম দিনে সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই না পৌঁছানোর কারণ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার বছরের শুরুতে অন্যান্য প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা বই পেলেও অষ্টম ও নবম শ্রেনির শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিন বই পাচ্ছে না।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপা হচ্ছে ৯৮ লটে। যার মধ্যে ৭০ লটের বই ছাপা শেষ হয়েছে। এরমধ্যে, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত এই তিনটি বই প্রাথমিকের প্রায় সব স্কুলের শিক্ষার্থীরা বুধবার (১ জানুয়ারি) হাতে পেয়ে যাচ্ছে। তবে বাকি বইগুলো হাতে পেতে আরও অন্তত ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই ছাপানো এখনো শেষ হয়নি বলে জানা গেছে।
এনসিটিবি বলছে, এ দুই শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ মাত্র শুরু করেছেন ছাপাখানা মালিকরা। অনেক ছাপাখানা এখনো চুক্তিও করতে পারেনি। বাকি ২৮ লটের বই ছাপাতে পুনরায় টেন্ডার দেওয়ায় দেরি হয়েছে। ফলে সেগুলো ছাঁপানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই সবচেয়ে বেশি ছাপানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় এ দুটি শ্রেণির দুইটি বা তিনটি করে বই পাঠানো হচ্ছে। ফলে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুই-তিনটি করে বই হাতে পেতে পারে। তবে সব উপজেলার ষষ্ঠ-সপ্তমের শিক্ষার্থীরা আবার বই পাবে না।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩২৩ উপজেলায় মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ির বই যাচ্ছে। এর বেশিরভাগই ষষ্ঠ-সপ্তমের দুটি বা তিনটি করে বই পাচ্ছে।
তবে বছরের প্রথম দিনে অষ্টম-নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীর হাতে বই দিতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই ছাপার কাজের চুক্তি করতে দেরি হয়েছে। এখনো বই ছাপা শুরু হয়নি। দু-একটা প্রেসকে কিছু বই ছাপিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও তেমন সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে। ফলে অষ্টম ও নবমের বই দেরিতে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বই ছাপাচ্ছে বলে একটু দেরি হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করেছি বছরের প্রথম দিনেই সকল শিক্ষার্থীকে কিছু না কিছু বই দিতে। তিনি বলেন, বই একেবারে যায়নি এমন উপজেলা ও স্কুল থাকবে না। হয়তো সব শ্রেণির সব শিক্ষার্থী প্রথমদিনে বই হাতে পাবে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেবো।
এদিকে ২০২৬ সালের শুরুতে এসএসসি পরীক্ষা। এ কারণে এবার দশমের বই আগে বিতরণে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। তারপরও এ শ্রেণির পাঁচ ভাগের এক ভাগ বই ছাপানো হয়েছে মাত্র।
এনসিটির বিতরণ নিয়ন্ত্রক শাখার তথ্যমতে, দশম শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক) ফিরে আসায় বই বেড়েছে। সব বিভাগ মিলিয়ে বই ৩৩টি। ফলে মোট বইও বেশি ছাপাতে হচ্ছে। এনসিটিবি বলছে, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সকল বই ছাঁপানো যাবে।
এদিকে বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্ষনের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে বই তুলে দিতে না পেরে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, এবার প্রাক- প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য ছাপা হবে প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মোট ছয় কোটি ৬ লাখ বই ছাপানো হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ