Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা ২০২৪
যেসব শব্দে মুখরিত ছিল বিদায়ী বছর

শাহ ওয়াজিহা রহমান, নিউজরুম এডিটর
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:১০ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৯

এই শব্দগুলোই ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হুয়েছে। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

কিছু একটা করতে চাইছেন, কিন্তু বন্ধুরা কোনোভাবেই চাইছে না আপনি সেটি করুন। এমন অবস্থায় কি কোনো বন্ধু আপনাকে বলে উঠছে, ‘ওই মামা, না প্লিজ!’

কিংবা আপনার বন্ধুদের কেউ হয়তো কিছু একটা করছেন, যা করা আপাতদৃষ্টিতে ঠিক হচ্ছে না। পাশের বন্ধুটি কি তাকে বলে উঠছে, ‘মুরুব্বি মুরুব্বি, উহু উহু…।’

সরাসরি আপনার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটুক বা না ঘটুক, ফেসবুকে কিংবা মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপথনে এই কথাগুলো নিশ্চয় শুনে থাকবেন। খেয়াল করে দেখুন তো, কথাগুলো কি মাস ছয়েক আগেও কোথাও শুনেছেন? উত্তরটা হবে, ‘না’। কারণ এই কথাগুলোই প্রচলিত হয়েছে গত কয়েক মাসের মধ্যে, যাকে বলে ‘ভাইরাল’ হয়েছে।

প্রতিটি সময়েরই আসলে নিজস্ব ভাষা থাকে, থাকে নিজস্ব স্বর। বছর বছর সেই ভাষার কোনো কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছ কিংবা বাক্য একটু বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে অন্যগুলোর চেয়ে। সদ্যই ২০২৫ সালে পা দিয়ে পেছনের দিকে তাকালে ২০২৪ সালে অনলাইন-অফলাইন কথোপকথনে এমন বহুল ব্যবহৃত কথাগুলোর হিসাব মেলানো খুব একটা কঠিন না। চলুন, নতুন বছরে পা দিয়েই একটু পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখা যাক, শত শত কথার ভিড়ে কোন কথাগুলো বাড়তিই গুরুত্ব পেয়েছে সবার কাছে, ছড়িয়েছে ‘ভাইরাল’ হয়ে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথামালা

গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় এক অধ্যায় রচিত হয়েছে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে। পতন ঘটেছে কর্তৃত্ববাদী শাসকের। সহস্রাধিক প্রাণহানি ঘটে সেই ৩৬ দিনের আন্দোলনে। এত অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমাণ মানুষকে হত্যার ঘটনা বিরল। সে আন্দোলন একাত্ম করেছিল সারা দেশের মানুষকে। স্বাভাবিকভাবেই ওই আন্দোলন ঘিরে যেসব শব্দ, বাক্য ব্যবহৃত হয়েছিল, সেগুলোর আবেদনই গত বছরের হিসাবের খাতায় ভারী হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
  • বৈষম্যবিরোধী / বৈষম্যহীন

কোনো ধরনের বৈষম্য বা অসমতা না থাকাই বৈষম্যহীনতা। যারা এ ধরনের বৈষম্য বা অসমতার বিরুদ্ধে তারাই বৈষম্যবিরোধী। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, সরকারি চাকরিতে যৌক্তিক কোটাব্যবস্থা, নারী-পুরুষ,ধর্ম বা জাতিতাত্ত্বিক পরিচয় নির্বিশেষে সব কাজে সবার সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, ধর্ষণ-নির্যাতনের অবসান, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সবার জন্য সমান রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা এই ধারণাগুলোই বৈষম্যবিরোধী বা বৈষম্যহীনতার সঙ্গে যুক্ত।

দেশের সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবি নিয়ে যে প্ল্যাটফর্মটি আন্দোলনের সূচনা করেছিল এবং যার সূত্র ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, সেই প্ল্যাটফর্মটির নাম বৈষম্যবিরাধী ছাত্র আন্দোলন। সরকার পতনের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা প্ল্যাটফর্মটির নামের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী শব্দটি গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দের একটি।

  • জেন-জি (জেনারেশন জেড)

১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, সেই প্রজন্মই জেনারেশন জেড বা জেন-জি নামে পরিচিত। এদের বর্তমান বয়স ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে।

প্রচলিত ধারণা ছিল, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই প্রযুক্তির মধ্যে বড় হওয়া এই প্রজন্মটি অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক, বিবেচনাহীন, সামাজিকতা ও কর্মবিমুখ। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সূত্র ধরে এই জেন-জিও ছিল গত বছরের বহুল চর্চিত শব্দগুলোর একটি। কারণ ওই আন্দোলনের নেতৃত্বেই ছিল মূলত এই প্রজন্ম।

সারা দেশের মানুষ একাত্ম হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলা, সহপাঠীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েও মনোবল ধরে রাখা, সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নানা চাপ উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে অনড় থাকার এবং সারা দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সরকার পতনের সফল আন্দোলন গড়ে তোলার কাজটি করেছে এই জেন-জিরাই। তাদের নিয়ে চর্চা একটু বেশি হবে, সেটিই তো স্বাভাবিক।

বিজ্ঞাপন
  • ৩৬শে জুলাই

সাধারণ হিসাবে জুলাই মাসের আয়ু ৩১ দিন। কিন্তু গত বছর বাংলাদেশ দেখেছে ৩৬ দিনের জুলাই মাস! সেটি কীভাবে!

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। এরপর ওই মাস যতই শেষ দিকে গড়াচ্ছিল, ততই আন্দোলন হয়ে উঠছিল সংঘাতময়। জুলাইয়ের একদম শেষ দিকে গিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সহপাঠীদের রক্তের ওপর দাঁড়ানো এই আন্দোলন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছে গেছে। কাজেই রক্তাক্ত জুলাই সেদিনই শেষ হবে, যেদিন বিজয় আসবে আন্দোলনে!

সে অনুযায়ীই ৩১ জুলাইয়ের পর সবাই যখন ১ আগস্ট দিন গুনছে, জেন-জি সে দিনটিকে হিসাব করেছে ৩২ জুলাই। এভাবেই এগিয়েছে আন্দোলন। বর্ষপঞ্জির পাতা উলটেছে, বদলায়নি জুলাই মাস। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন যখন জয় পেল, সেই দিনটি স্বাভাবিক বর্ষপঞ্জির হিসাবে ৫ আগস্ট হলেও জেন-জি অভিধানে হয়ে ওঠে ৩৬ জুলাই।

  • জুলাই বিপ্লব

জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলনের মাধ্যমেই দীর্ঘ ১৬ বছর দেশ শাসন করতে থাকা ক্ষমতাসীনদের পতন ঘটানো হয়েছে। এই গণআন্দোলনকে বিপ্লব বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। আর আন্দোলনটির সফল পরিসমাপ্তিও ঘটে ‘জুলাই মাসে’— ৩৬শে জুলাইয়ে! এ কারণেই ওই আন্দোলন জুলাই বিপ্লব।

  • সমন্বয়ক

যেকোনো কাজ করার জন্য সমন্বয়টি যারা করে থাকেন, তাদেরই বলা হয় সমন্বয়ক। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় থেকেই এই শব্দটিব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা, এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যারা চালিয়ে আসছেন, সাংগঠনিক কাঠামোতে তারাই ছিলেন সমন্বয়ক।

আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা থেকে শুরু করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার কাজটি করেছেন এই সমন্বয়করা, যাদের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের বেশি। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কয়েকজনের সন্ধান যখন মেলেনি, তখন অন্য সমন্বয়করা সামনে এসে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পদে থাকা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। আন্দোলনের সুবাদে পরিচিতমুখ হয়ে ওঠা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা, আব্দুল কাদের, হান্নান মাসউদরাও সমন্বয়ক ছিলেন।

  • স্বৈরাচার/ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারের দোসর/ফ্যাসিস্টের দোসর

ফ্যাসিস্ট বলতে নিপীড়ক, অসহিষ্ণু, অরাজকতাবাদী, অগণতান্ত্রিক, গণহত্যাকারী, বর্ণবাদী, দমনমূলক, আক্রমণাত্মক ও কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠীকে বোঝায়। অন্যদিকে স্বৈরাচার হলো সেই শাসক যিনি জনগণ, সংবিধান, আইন, নীতি, রীতিসব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখেন। আর এসব বৈশিষ্ট্য যাদের রয়েছে তাদের সহযোগী যারা তারাই হলো দোসর।

জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দগুলোর মধ্যে ছিল এই শব্দগুলো। স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্ট বলতে মূলত বোঝানো হয়েছে শেখ হাসিনাকেই। আর যারা শেখ হাসিনার সহযোগী ছিল, তাদেরই আখ্যায়িত করা হয়েছে স্বৈরাচারের দোসর বা ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে।

  • রাজাকার

রাজাকার শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বেচ্ছাসেবী হলেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল এবং হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত ও পাকিস্তানি বাহিনীতে সহায়তা করেছিল, তাদেরই বলা হয় রাজাকার। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের জন্যই ব্যবহৃত হয় এই শব্দ।

দীর্ঘ ৫৩ বছর পর ফের রাজাকার শব্দটি প্রবলভাবে ফিরে এসেছে চব্বিশে। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সময় ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলে বসেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) নাতিপুতিরা (চাকরি) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা (চাকরি) পাবে?’

এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনরতদের গণহারে ‘রাজাকার’ বলা হয়েছে অভিহিত করে রাতেই শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেই মিছিলে স্লোগান ছিল, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার।’ ১৪ জুলাইয়ের ওই ঘটনায় ‘রাজাকার’ শব্দটি গোটা আন্দোলনকেই নতুন মোড় দেয়।

  • গ্রাফিতি

কারও কোনো অনুমতির তোয়াক্কা না করে কোনো দেয়ালে লেখনী বা ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য ফুটিয়ে তোলার নামই হলো গ্রাফিতি। শিল্পের এই মাধ্যমটিকে যুগে যুগে সবাই প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। জুলাই গণআন্দোলনেও গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকাসহ সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আন্দোলনের বার্তা, যা অনুপ্রাণিত করেছে সবাইকে।

  • অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে সরকার শপথ নেয়, সেটিই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রথম বাংলাদেশে গঠিত হলেও এটি আগেকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। দুটিই মূলত নির্বাচিত দুটি সরকারের মধ্যবর্তী সময়ের অস্থায়ী সরকারব্যবস্থা।

  • পানি লাগবে পানি

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই নিহত হন শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী মুগ্ধ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এমবিএ করছিলেন। পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে ফ্রিল্যান্সিং করে আসছিলেন।

শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন তিনি। ঢাকায় আন্দোলনরতদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে পানি বিতরণ করতেন তিনি। শত শত পানির কেস সংগ্রহ করে আন্দোলনস্থলে গিয়ে হাঁক দিতেন, ‘পানি লাগবে, পানি?’ বলে। আন্দোলনের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মুগ্ধ। তার স্মরণেই সবাই ‘পানি লাগবে, পানি’ শব্দগুচ্ছকে আপন করে নেয়।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন ঘিরে আরও বেশকিছু শব্দ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’, ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, ‘মার্চ টু ঢাকা’ শব্দগুচ্ছগুলোও ব্যাপক পরিচিতি পায় দেশ জুড়ে।

ফেসবুকে ‘ভাইরাল’ আরও যেসব শব্দ/কথা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানেই যেন কথার ফুলঝুড়ি। এর মধ্যেই কিছু কিছু শব্দ বা কথা হয়ে ওঠে ‘ভাইরাল’, যা ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। তেমন কিছু বিশেষ শব্দ বা কথার সন্ধান পাওয়া যায় বিদায় নেওয়া ২০২৪ সালেও।

ওই মামা, না প্লিজ: কাউকে কোনো কিছু থেকে বিরত থাকতে জেন-জি’রা বলে থাকে ‘ওই মামা, না প্লিজ’। অবশ্য জেন-জি ছাপিয়ে এখন মিলেনিয়ালদের মুখেও এ কথা উঠে এসেছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ‘ওই মামা, না প্লিজে’র বহুল ব্যবহৃত।

সোর্স- চালাই দেন: সূত্র না দিয়েও কোনো তথ্যকে বিশ্বাস করতে বলা হলে এবং সেটি ধরা পড়ে গেলে সে অবস্থাকেই ‘সোর্স- চালাই দেন’ বলা হয়। এর অর্থ, তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রমরমা এই সময়ে তথ্যের সঙ্গে অপতথ্য, গুজব, ভুয়া তথ্য, ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি হরহামেশাই দেখা যায়। এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই তাই ফেসবুকে দেখবেন ‘সোর্স- চালাই দেন’।

মুরুব্বি মুরুব্বি উহু উহু: এক ওয়াজে ইসলামি বক্তা মাওলানা মোস্তাক ফয়েজিকে বলতে শোনা যায় ‘মুরুব্বি মুরুব্বি, উহু উহু…’। মূলত দর্শকসারির একজন ওয়াজ মাহফিল থেকে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে থামাতে কথাগুলো বলেন মওলানা মোস্তাক। তার কয়েক সেকেন্ডের ওই অভিব্যক্তির ভিডিওই ভাইরাল হয়ে পড়ে। যেকোনো জায়গায় যেকোনো স্থানে এখন মজার সম্বোধন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে আকছার।

নাটক কম করো পিও: ‘প্রিয়’ শব্দের ব্যঙ্গার্থক প্রয়োগ ‘পিও’। কেউ মন থেকে কিছু না করে লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করলে তাকেই ব্যঙ্গ করে বলা হয়ে থাকে, ‘নাটক কম করো পিও’। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা যখন বিভিন্ন ঘটনায় শোক প্রকাশ করতেন, আন্দোলনকারীরা তার উদ্দেশে এ কথাটিই বলতেন।

অল আইজ অন: কোনো ঘটনা বা ইস্যু প্রসঙ্গে বিশেষভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে ‘অল আইজ অন’ হ্যাশট্যাগটি। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময়ও কোনো এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। উত্তরায় সংঘর্ষের সময় ‘অল আইজ অন উত্তরা’ বা মহাখালীতে সংঘর্ষের সময় ‘অল আইজ অন মহাখালী’ ট্যাগগুলো ব্যবহার করেছেন সবাই।

বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দ

ব্রেইন রট: বাংলা ভাষায় এর অর্থ মস্তিষ্কের পচন। ব্যক্তিবিশেষের মানসিক অবস্থার অবনতি বা চিন্তাশক্তি লোপ পাওয়ার পরিস্থিতিকে বোঝাতে এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করা হয়। অক্সফোর্ড ও কলিন্স ইংলিশ ডিকশনারি এই শব্দগুচ্ছকে বছরের সেরা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ডেমুর (Demure): এই শব্দটির অর্থ বিনয়ী, সংযমী বা শান্ত। সাধারণত কোনো নম্র ও বিনয়ী ব্যক্তিকে প্রশংসা করতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ডিকশনারি ডটকম একে সদ্য বিদায়ী বছরের সেরা শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ম্যানিফেস্ট (Manifest): আচরণ, কাজ বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কোনো কিছু খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরাকে বলা হয় ম্যানিফেস্ট। ক্যামব্রিজ ডিকশনারির দৃষ্টিতে এটিই ছিল গত বছরের সেরা শব্দ।

পোলাইরাইজেশন (Polarization): এর বাংলা অর্থ মেরুকরণ। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বা বিপরীতধর্মী অবস্থা বা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে তাকেই বলা হয় পোলারাইজেশন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক পরস্পরবিরোধী মতবাদ, বিশ্বাস বা আদর্শের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারির বিবেচনায় এটিই ছিল ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’।

সিচুয়েশনশিপ: গত বছরের অন্যতম আলোচিত শব্দ ছিল সিচুয়েশনশিপ। স্থায়ী কোনো সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি না থাকলেও দুজন যুগলের মতো আচার-আচরণ করলে সে পরিস্থিতিতে বলা হয় সিচুয়েশনশিপ।

হাইব্রিড ডেটিং: কোনো একটি সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আরও এক বা একাধিক সম্পর্কে জড়ালে সে অবস্থাকে বলা হয় হাইব্রিড ডেটিং। বহুগামিতার চর্চা যাদের মধ্যে রয়েছে তারা হাইব্রিড ডেটিং করে থাকেন।

ইউনিসেক্স: লিঙ্গ নিরপেক্ষতা বোঝাতে ব্যবহার করা হয় এই শব্দ। কোনো পোশাক বা বস্তু সুনির্দিষ্টভাবে নারী বা পুরুষের জন্য তৈরি না হয়ে উভয়ের জন্যই তৈরি করা হলে সেটিকে ইউনিসেক্স বলা হয়।

পুকি: পুকি বলতে স্নেহসুলভ কোনো সম্বোধনকে বোঝায়। খুব আদর করে কাউকে ডাকার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

ডেলুলু: ডিলিউশনাল (Delusional) শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ ডেলুলু, যেটি ব্যবহার করে থাকে জেন-জি। কোনো বিষয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়া বা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকার অবস্থাকেই ডেলুলু বলে।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ/টিআর

২০২৪ সাল শব্দ