বর্ষবরণে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না দেখায় ক্ষোভ
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৪৫ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৫
ঢাকা: এবারও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ ও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিকট শব্দে আতশবাজি-পটকা আর ফানুসে উদ্যাপিত হয়েছে ইংরেজি নববর্ষ, স্বাগত জানানো হয়েছে ২০২৫ সালকে। মধ্যরাতের আগেই শুরু হয় এই উদ্যাপন, যা চলে ঘণ্টা দুয়েক।
এই সময়ে আতশবাজির আলো আর পটকার শব্দে গোটা ঢাকা কেঁপে ওঠে। তুলনামূলকভাবে ফানুস দেখা গেছে কম।
রাজধানীবাসীর একাংশ যখন এমন উদ্যাপনে ব্যস্ত, আরেকটি অংশই তখন এমন উদ্যাপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সপ্তাহখানেক আগে থেকে সোচ্চার ছিল পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি)। পরিবেশ মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যারা আতশবাজি-পটকা ফোটাবে, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের সাজা দেওয়া হবে। ডিএমপি তো এসবে নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেছিল।
রাজধানীবাসীর অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় বা ডিএমপির হুঁশিয়ারি-নিষেধাজ্ঞা কিছুই কাজে আসেনি। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়-ডিএমপিও হুঁশিয়ারি-নিষেধাজ্ঞা দিয়েই দায় সেরেছে বলে অভিযোগ তাদের। কারণ ঢাকা জুড়ে আতশবাজি-পটকার রমরমা সময় গেলেও কোথাও পুলিশ বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি।
আরও পড়ুন- আতশবাজি-পটকা ফুটিয়েই ২০২৫ সাল বরণ, কাজে আসেনি বিধিনিষেধ
১ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই আতশবাজি ও পটকার বিকট আওয়াজ পাওয়া যায়। মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়া, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ওয়ারী ও বংশাল এলাকায় বিপুল পরিমাণ আতশবাজি ফোটানো হয়েছে। এককথায় আতশবাজি আর পটকায় ভরপুর ছিল থার্টি ফার্স্ট নাইটের ঢাকার আকাশ।
পুরান ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতশবাজির পাশাপাশি অনেক বাড়ির ছাদেই ছিল ফানুস ওড়ানোর আয়োজন। গত বছরের তুলনায় অবশ্য এবার কম ফানুস ওড়ানো হয়েছে বলে জানালেন তাঁতীবাজারের বাসিন্দা সুমন পোদ্দার। তবে ছাদে ছাদে গানবাজনা, বারবিকিউয়ের মতো নানা আয়োজন ছিল বলে জানান তিনি।
শ্যাওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কবির বলেন, রাত ১১টা থেকেই আতশবাজি ফুটছে, পটকা ফুটছে। কোনো বিরাম নেই। এখন রাত প্রায় ১টা বাজে। এখনো পটকা ফুটছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে যে এত নিষেধাজ্ঞা, এত মোবাইল কোর্টের হুঁশিয়ারি শুনলাম, তার কিছুরই দেখা মেলেনি। সবাই যে যার মতো নববর্ষ পালন করছে।
আতশবাজি ও পটকার শব্দের তীব্রতায় ক্ষোভ জানিয়ে সাংবাদিক জিমি আমির ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জাস্ট ভয়ংকর। এই শব্দ আর নেওয়া যাচ্ছে না! মনে হচ্ছে সাউন্ড গ্রেনেড।’
পুরান ঢাকার বাসিন্দা গাজী সুমন লিখেছেন, ‘এত মানা সত্ত্বেও কেউ কোনো কথা শুনল না। প্রতিটি ছাদেই আতশবাজি হলো। অথচ পুলিশকে একটা ব্যবস্থাও নিতে দেখলাম না।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদ মাহমুদ মাহিন লিখেছেন, ‘শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, তার আশপাশে নিউরোসায়েন্স, চক্ষু, হৃদরোগ, কিডনি ডিজিজেস, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। সব বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় যখনো কোনো আতশবাজি ফাটানো হয় না, তখন ১৫ মিনিটের আতশবাজির আনন্দে পুরো শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর মেতে ওঠে। তারা ভাবে না, এই ১৫ মিনিট কারও জীবনের শেষ ১৫ মিনিটও হতে পারে।’
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা বাঁধন অধিকারী লিখেছেন, ‘এত এত ক্যাম্পেইন হলো, কোনো লাভ হলো না! কান ঝালাপালা লেগে যাচ্ছে। মানুষ প্রজাতি হিসেবে নিজেদের ধ্বংসকে দিনকে দিন অনিবার্য করে তুলছে।’
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর