Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা ২০২৪
হামলা-মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে জাপার বছর শেষ

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৫ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৬

জাতীয় পার্টির সালতামামি। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি জন্ম। সেই হিসাবে দলটি ৩৮ বছর পার করল। জন্ম থেকেই দলটি আলোচনা ও সমালোচনার মধ্য দিয়ে রাজনীতি করে আসছে। যদিও রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো রাজনীতি নেই; অন্য দলের ওপর ভর করে ক্ষমতার অংশীদার হওয়াই তাদের বর্তমান রাজনীতির লক্ষ্য। এই দলটি শুরু থেকেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে স্বৈরাচারের তকমা পায়। আবার গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেও এক পর্যায়ে এসে সংসদের প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে। যদিও তাদের এই ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

সবকিছু মিলিয়ে গতবছর আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে দলটি তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। গত ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পর বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণে বর্তমানে দলটির নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে চুপচাপ রয়েছেন। যদিও নতুন বছরের শুরুতে (১ জানুয়ারি ) দলটি ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশার কথা জানাবে।

বিজ্ঞাপন

১ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জাতীয় পার্টি। এই আলোচনা সভা থেকে এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণাসহ বিগত সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও বর্তমান সরকারকে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানাতে পারেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কদের।

জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রত্যাশা, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে এবং সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের দল এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সেই নির্বাচনে যে দলই জিতুক না কেন সরকার গঠনে জাতীয় পার্টিকে ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে, ‘নতুন বছরে আমারা প্রত্যাশা করছি, সবদলকে নিয়ে একটি সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। কোনো দলকে বাদ দিতে চাইলে সেটি জনগণই ভোটের মাধ্যমে বাতিল করে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নতুন বছরে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ, জেলায় জেলায় সফর করে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করবে। এ সময় রাজনীতির নতুন চিন্তাধারা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মন জয় করবে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন যখনই হোক আমার অংশ নেব। আমারা নির্বাচনে সবদলের অংশগ্রহণ চাই। নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।’

’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর থেকেই জাতীয় পার্টি (জাপা) ঠিক মতো উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি নিজেদের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সাহসও তারা কোনোদিন দেখায়নি। ক্ষমতার পালাবদলে জাপা সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্রীড়ানক হিসেবে কাজে লেগেছে। সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই দলটি হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আর এর মধ্য দিয়ে দলটি প্রায় সবসময়ই ক্ষমতার বলয়ে অবস্থান করেছে।

গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদল জাতীয় পার্টি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, জাপার দলীয় সিদ্ধান্তসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো আওয়ামী লীগ। ’২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়ন কাকে দিতে হবে তা ঠিক করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই সময়ও আওয়ামী লীগ ডামি জাতীয় পার্টি হিসেবে বেগম রওশন এরশাদ গ্রুপকে প্রস্তুত রাখে। জিএম কাদের নির্বাচন বর্জন করলেই রওশন এরশাদকে দিয়ে নির্বাচন করানো হতো। এমন পরিস্থিতির মুখামুখি হতে হয় দলটির চেয়ারম্যানকে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে জিএম কাদের নির্বাচনে অংশ নেয়।

বর্তমানে বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন একটি জাতীয় পার্টি রয়েছে। তবে দলটির কার্যক্রম নেই। এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের নেতৃত্বেও জাতীয় পার্টি রয়েছে। যদিও দলটি বিলুপ্তির পথে। মোট কথা জাপা যাদের-ই ক্রীড়ানক হিসেবে কাজে লেগেছে তারাই দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। কখনো কখনো আবার পার্টিতে ভাঙন তৈরি করে দিয়েছে। সেই ভাঙনের ফলে জাতীয় পার্টি এখন চারটি।

এদিকে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে জাতীয় পার্টি পূর্ণ সমর্থন দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাপাও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় পরামর্শের জন্য সেনাবাহিনীর ডাক পায়। কিন্তু গত ১৫ বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করা জাপা ধীরে ধীরে সেই জায়গা হারিয়ে ফেলে। ফলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকেও তাদের ডাকা হয় না। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এতে জাপার সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি। সেই দূরত্ব এখনো ঘোচেনি।

গত ৩১ অক্টোবর আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে থাকার অভিযোগে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ‘ছাত্র-জনতা’। কারণ, জাতীয় পার্টি ২ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় সেই সমাবেশের প্রস্তুতি সভা চলছিল। এ সময় ছাত্ররা প্রথমে হামলা চালায়। তখন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করে। এরপর ‘ছাত্র-জনতা’ সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায় ও পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কাছে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিছুদিন আগে গণঅধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুরু জিএম কাদেরকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়করাও জিএম কাদেরসহ দলের নেতাদের গ্রেফতারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এর জের ধরে সম্প্রতি রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে রংপুর জাতীয় পার্টি। ওই সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। এর জের ধরে গত ৩১ অক্টোবর দলের প্রধান কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার হামলার পর থেকে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

আতঙ্ক গ্রেফতার জাতীয় পার্টি মামলা হামলা

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর