ফিরে দেখা ২০২৪
পোশাক খাতে শ্রমিক অস্থিরতা ও রফতানি ধরে রাখাই ছিল চ্যালেঞ্জ
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৫২
ঢাকা: বিদায়ী বছরে দেশের পোশাক খাত অস্থির সময় অতিক্রম করেছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শ্রমিক বিক্ষোভে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে পোশাক খাতের উৎপাদন কার্যক্রম। একাধিক কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকে বিভিন্ন পোশাক কারখানা। দেখা দেয় পণ্য পরিবহন সংকট, শিপমন্টে করতেও বেগ পেতে হয়ে উদ্যোক্তাদের।
আবার বহির্বিশ্বেও দেশের পোশাক রফতানি কমেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় রফতানির ধারা ছিল একেবারেই নেতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের দামও কমেছে।
এদিকে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকরা পেয়েছেন সুখবর। দীর্ঘ আন্দোলনের পর নতুন বছর থেকে ৯ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি) আদায় করে নিয়েছেন তারা। আর বিদায়ী বছরে প্রায় ২৬টি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে পোশাক খাতে শ্রমিক অস্থিরতা ও রফতানি ধরে রাখাই ছিল বিদায়ী বছরের সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ।
-
ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব পোশাক খাতে
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রায় ১৩ দিন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। আন্দোলন শুরুর প্রথম দিকেই ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব পড়ে দেশের রফতানির আয়ের প্রধান উৎস পোশাক খাতে। উদ্যোক্তারা তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। থমকে গিয়েছিল পোশাক খাতের তথ্য আদান-প্রদান। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ইন্টারনেট চালুর দাবিও জানানো হয়েছিল। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতায় পণ্য পরিবহনে অনেক শিপমেন্ট প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রফতানি আয়েও এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা গেছে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতনের পর দেশের পোশাক খাত টালমাটাল হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে অস্থিরতা। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রভাবশালীরা মরিয়া হয়ে ওঠে। শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা চলে। সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে প্রায় প্রতিদিনই পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন চলতে থাকে।
শ্রমিক আন্দোলনে টানা কয়েকদিন দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। বন্ধ হয়ে যায় বেক্সিমকো গ্রুপের বেশ কিছু কারখানাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প এলাকায় সেনাসহ যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যৌথ বাহিনীর একাধিক অভিযানে গ্রেফতার হয় পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ছড়ানো উসকানিদাতারা। পোশাক খাতের শ্রমিক আন্দোলন ঘিরে বিদায়ী বছরে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
-
পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি ৯ শতাংশ হারে
বছরের শেষ দিকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি সুখবর আসে। সেটি হলো— এখন থেকে শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট বাড়বে ৯ শতাংশ হারে। অর্থাৎ এখন থেকে প্রতি বছর পোশাক শ্রমিকরা বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন ৯ শতাংশ হারে। এর আগে পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হতো ৫ শতাংশ হারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকরা আরও ৪ শতাংশ বেশি হারে ইনক্রিমেন্ট পাবেন।
গত ৯ ডিসেম্বর পোশাক শিল্প খাতের নিম্নতম মজুরি পুনর্মূল্যায়ন ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে সক্ষমতা ও করণীয়বিষয়ক কমিটির পঞ্চম সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়। পরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি হয়। মূলত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পোশাক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যে সব দাবি উঠে তা বাস্তাবায়নেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
-
বিদায়ী বছরে সবুজ কারখানা বেড়েছে অন্তত ২৬টি
বিদায়ী ২০২৪ সালে দেশে সবুজ কারখানা (গ্রিন ফ্যাক্টরি) বেড়েছ অন্তত ২৬টি। নতুনগুলোসহ দেশে এখন সবুজ কারখানা ২৩২টি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক। মূলত ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানার সার্টিফিকেশন দিয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানা ২৩২টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম ক্যাটাগরির ৯২টি, গোল্ড ১২৬টি, সিলভার ১০টি ও সার্টিফায়েড ক্যাটাগরির চারটি। এ ছাড়া ৫৫০টির বেশি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি থেকে নিবন্ধন পাওয়ার পাইপলাইনে রয়েছে। আর সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।
-
ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা
বছরের মধ্যভাগ থেকেই পোশাক রফতানির প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। তবে জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের তথ্য বলছে, শেষ দিকে এসে ইউরোপে পোশাক রফতানিতে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এই সময়ে ইউরোপে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে এর আগের মাসগুলোতে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে বেশ নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়।
-
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ মাসে পোশাক রফতানি কমেছে ২৫৪৪ কোটি টাকা
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, সেখানে চলতি বছর এর পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পোশাক রফতানি কমেছে ২১২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে ২১ দশমিক ২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি কম হয়েছে, টাকার অঙ্কে যা দুই হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা (১ ডলার ১২০ টাকা ধরে)।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সা) এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত বাকি মাসগুলোর তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি কমে যাওয়াকে অবশ্য খুব বেশি নেতিবাচক হিসাবে দেখছেনও না দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
সারাবাংলাা/ইএইচটি/টিআর
গ্রিন ফ্যাকটরি ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন তৈরি পোশাক খাত পোশাক খাত পোশাক রফতানি সালতামামি ২০২৪