Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা ২০২৪
বন্ধ না হলেও গুরুত্ব হারিয়েছে মেগা প্রকল্পের ফাস্ট ট্র্যাক

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩২

ঢাকা :  বন্ধ না হলেও গুরুত্ব হারিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পগুলোর ফাস্ট ট্র্যাক। এটি গঠনের কারিগর ছিলেন তৎকালীন ইআরডি সচিব, পরবর্তীতে মূখ্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের এমপির পদ বাগিয়ে নেওয়া আবুল কালাম আজাদ। ফাস্ট ট্র্যাক গঠন করার পরপরই সরকারের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৮টি প্রকল্পকে এর আওতাভুক্ত করা হয়। বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো এসব প্রকল্পে। পাশাপাশি প্রকল্পগুলো তদারকিতে গঠিত হয় ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ছিলেন এ কমিটির সভাপতি।
গত আগস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো চালু রাখার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিলেও কার্যত প্রকল্পগুলো এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি পুনর্গঠন বা পূর্ব কমিটির কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে ফাস্ট ট্র্যাক বলে কিছু থাকবে কি না- সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি অন্তবর্তীকালীন সরকার।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ৮টি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলমান ৭টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।  এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে। শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে গড় আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

ফাস্ট ট্র্যাকের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এর সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে একটি কংক্রিট সিদ্ধান্ত দরকার। কেননা, এগুলো চলবে, না কি যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায়ই বন্ধ করা হবে- এর কোনো সুনিদিষ্ট দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় নি। আগের মতো প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির কোনো বৈঠকও হচ্ছে না। আগে তিনমাস পর পর নিয়মিত বৈঠক হতো। এখন এসব নিয়ে কোন নির্দেশনা নেই। পাশাপাশি কোন পর্যালোচনা হচ্ছে বলেও মনে হয় না। তবে সাধারণ অন্যান্য প্রকল্পের মতোই প্রকল্পগুলো চলছে। এদিকে এসব প্রকল্পে যেহেতু সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা আছে, সেহেতু অবহেলারও সুযোগ নেই।’

তিনি জানান, ‘তবে আইএমইডি থেকে আগের মতোই মনিটরিং প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু কোন ফিডব্যাক পাওয়া যায় না।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এর একটি সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পগুলো মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় একটি রেল প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে- ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প থেকে বাদ গেছে রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ অংশের নির্মাণ কাজ। এর ফলে ফলে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।

প্রল্পটির বাদ দেওয়া অংশের বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে গভীরভাবে চিন্তা করা হয়নি। তখন বলা হয়েছিল যে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঘুমধুমের ওপারে মিয়ানমারে শুধু পাহাড়ি এলাকা। সেখানে রেল লাইন তৈরির কোন পরিকল্পনাও নেই। এমতাবস্থায় এত টাকা ব্যয় করে এ প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজন, তা বোধগম্য নয়।

পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিলেও রামু-ঘুমধুম অংশের জন্য অর্থায়নে অপারগতা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া মিয়ানমারের যে সংঘাতময় অস্থির পরিস্থিতি চলছে সেখানে ট্রান্স এশিয়ান রেল সংযোগ স্থাপন আপাতত সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের নিজস্ব তহবিলের বিপুল অঙ্কের ব্যয় করে গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করাটা যৌক্তিক হবে না। এটা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাদ দেওয়া হয়েছে।

মেগা প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা

পদ্মা সেতু প্রকল্প: ২০২৩ সালের  ২৫ জুন উদ্বাধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। সেতুর বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে শতভাগ। গত জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ০১ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৪
হাজার ৯৮১ কোটি ২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাশিয়ার ঋণ ৯১ হাজার ৪০ কাটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি
বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

মেট্রোরেল: মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০২৩ সালের  ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। পরবর্তীতে মতিঝিল পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। এখন নিয়মিত উত্তরা-মতিঝিল ট্রেন চলাচল করছে। তবে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৭১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ: এই প্রকল্পে গত জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এটি
বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ আছে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য
ছিল।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প: এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম: মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে
বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত খরচ  হয়েছে তিন হাজার ৮০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রকল্পের ভৗত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ: দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

ফাস্ট ট্র্যাক ফিরে দেখা ২০২৪ মেগা প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর