Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরে দেখা ২০২৪
তীব্র হয়েছে যুদ্ধ-সংঘাত, বেড়েছে দুর্যোগ-দুর্ঘটনা

নুসরাত জাহান তনু, নিউজরুম এডিটর
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৬ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৫১

মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে ২০২৫ সাল। বিদায়ী ২০২৪ সালের শুরুতে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ছিল, আগের বছর যুদ্ধ দিয়ে শেষ হওয়ায় এ বছরে হয়তো মানুষ আরও একটু মানবিক হবে। বন্ধ হবে যুদ্ধ। বাস্তবে সে আশার এতটুকুও পূরণ হয়নি। বরং নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধ, তাতে জড়িয়ে পড়েছে নতুন নতুন দেশ। তাতে একদিকে বেড়েছে প্রাণহানি, সেই সঙ্গে বেড়েছে ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত আর শরণার্থীতে পরিণত হওয়া মানুষের সংখ্যা। রাজনৈতিক পরাশক্তিগুলোর যে অবস্থান, তাতে শিগগিরই যুদ্ধ থেকে মুক্তি মিলবে— এমন আশা দুরূহ।

বিজ্ঞাপন

বিদায় নিতে যাওয়া বছরটিতে পৃথিবী ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা ঘটনায় ভরপুর। বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ-সংঘাত, অর্থনীতি, পরিবেশ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ দেখা গেছে এ বছরে। বছর জুড়ে বিশ্ব অর্থনীতি ছিল অস্থির। মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ নানা কৌশল নিয়েছে। দেশে দেশে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা। তার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে মানুষকে।

বিজ্ঞাপন

এত সব লড়াই-সংগ্রামের মধ্যেই এ বছর ছিল প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির বছর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন মানব সভ্যতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু তাই নয়, দেশে দেশে তরুণদের উত্থান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

২০২৪ সালে না পারলেও ২০২৫ সালে কি এসব ইতিবাচক পরিবর্তনের হাত ধরে মানুষ যুদ্ধ-সংঘাত ছেড়ে শান্তির পথে হাঁটতে পারবে? সে প্রশ্নের জবাব মিলবে আরও ৩৬৫ দিন পরে। বছর বিদায় নেওয়ার এই সময়ে এখন দেখে নেওয়া যাক ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

  • ইসরায়েলি আগ্রাসন

হামাসের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আগের বছর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তা অব্যাহত ছিল ২০২৪ সালের পুরোটাই সময়। এ যুদ্ধের অবসান তো দূরের কথা, ইসরায়েল নতুন করে আবার যুদ্ধে জড়িয়েছে লেবানন, ইরান, সিরিয়ায়।

ইসরায়েলের দাবি, এই হামলাগুলোর প্রধান কারণ নিরাপত্তা ইস্যু এবং হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রতিরোধ করা। কিন্তু বাস্তবে ইসারয়েলের এই আগ্রাসনের বলি হচ্ছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাই বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যার সামিল।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে গাজার মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রকেট হামলার মাধ্যমেই মূলত এই সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গাজায় মোট ৪৩ হাজার ৬০৩ জন নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ দুই হাজার ৯২০ জন আহত হয়েছেন।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা

অন্যদিকে লেবাননে ইসরায়েলের হামলার কারণ ছিল হিজবুল্লাহর আক্রমণ। ইসরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহ তাদের সীমান্তে হামলা চালিয়েছে এবং গোপন অস্ত্র মজুত করছে। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে মোট তিন হাজার ১৮৯ জন নিহত ও ১৪ হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের ও লেবাননের সমর্থন করায় ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বিরোধ অনেক পুরনো। ২০২৪ সালের শুরুর দিক থেকেই এ বিরোধ বাড়তে থাকে। বছরের শেষভাগে দুই দেশই একে অন্যের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এ ছাড়া সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ সরকারের দীর্ঘ দিনের মিত্র ইরান। সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর অস্ত্রভাণ্ডার ও সামরিক স্থাপনাও রয়েছে। আসাদ সরকারের পতনের পর সেগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায় ইসরায়েল।

  • মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

গোটা বিশ্বই ২০২৪ সালের যে ঘটনাটির দিকে তাকিয়ে ছিল, সেটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে ভরাডুবির পর বয়সজনিত কারণে দলীয় চাপে সরে দাঁড়াতে হয় তাকে।

নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প তার প্রশাসনের সময়কালের সাফল্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি আগের মতোই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে জোর দেন। বিপরীতে কমলা হ্যারিস প্রগতিশীল নীতি বাস্তবায়নসহ গর্ভপাতের অধিকার স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। অভিনব পন্থায় নির্বাচনি প্রচারের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচন ছিল রোমাঞ্চকর। এর মধ্যে ট্রাম্পের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পোশাক পরিধান করে নির্বাচনি প্রচার দৃষ্টি কেড়েছে সবার। অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারে জেনিফার লোপেজের মতো তারকার উপস্থিতি যোগ করে বাড়তি মাত্রা।

নির্বাচনের সময় মেইল-ইন ভোট এবং আগাম ভোট দেওয়ার হার ছিল অনেক বেশি। ৫ নভেম্বরের সেই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয় এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত মার্কিন মুলুকের ঝামেলা মিটিয়ে অন্য দেশগুলোতে নাক কত কম গলাতে পারেন, সেটিই দেখার বিষয়।

  • কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন

এ বছরের ১১ থেকে ২২ নভেম্বর আজারবাইজানের বাকু শহরে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৯ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ১৯৫টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

কপ-২৯ সম্মেলন

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং নিম্ন-কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ানো ছিল এই সম্মেলনের অন্যতম প্রধান বিষয়। শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও অনেক উন্নয়নশীল দেশ এই পরিমাণকে অপর্যাপ্ত বলে সমালোচনা করেছে এবং ন্যূনতম ৫০০ বিলিয়ন ডলারের দাবি জানিয়েছে রেখেছে।

  • ভারতের লোকসভা নির্বাচন

২০২৪ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনের দিকেও দৃষ্টি ছিল সবার। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্যতম উদাহরণ এই নির্বাচন। এতে সাত দফায় ভোট নেওয়া হয় ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত দেড় মাসে। ১৮তম লোকসভা গঠনে ৫৪৩ আসনের এই নির্বাচনে কোনো দল বা জোটের সরকার গঠনে ন্যূনতম আসনসংখ্যা প্রয়োজন ছিল ২৭২টি। ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) লক্ষ্য ছিল ৪০০ আসন।

ভারতের লোকসভা নির্বাচন ২০২৪

লক্ষ্য বড় হলেও এবার হোঁচট খেতে হয় বিজেপিকে। আগের দুই মেয়াদেও জোট হিসেবে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। তবে দুইবারই তাদের একক দল হিসেবেই সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। এবার সে হিসাব পালটে যায়। বিজেপি পায় ২৪০ আসন। জোটের সহায়তা নিয়ে অবশ্য মোদিই শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন।

ভারতের জাতীয় এই নির্বাচনে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তথা কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন। তবে সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেসহ তাদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ‘ইন্ডিয়া’ এই নির্বাচনে পেয়েছে ২৩৫টি আসন। মোদির আধিপত্য খর্ব হওয়ার পাশাপাশি এই নির্বাচনকে কংগ্রেসের জন্যও পুনরুজ্জীবন মনে করা হচ্ছে।

  • শেখ হাসিনা সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ

২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্যও অবিস্মরণীয় একটি বছর। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বছরের শুরুতেই আরেকটি নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় চিরস্থায়ীই মনে করা হচ্ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোও কোনোভাবেই টলাতে পারছিল না এই সরকারকে। শেষ পর্যন্ত এ বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

এ বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ছয় বছরের ব্যবধানে ফের কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। টানা দুই সপ্তাহ আন্দোলনের পর ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় হতাহতের ঘটনায় এই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত পরিণতির দিকেও ধাবিত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট। সারা দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসতে শুরু করে। সরকার ইন্টারনেট সংযোগ খুলে দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ে। ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে। ৫ আগস্ট ঘোষণা করা হয় মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি।

শেষ পর্যন্ত ওই দিন তথা ৫ আগস্ট দুপুরেই শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। প্রায় দেড় হাজার প্রাণহানির পর সরকার পতনের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যেখানে স্থান পান সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

  • সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতন

২০২৪ সালের একদম শেষ সময়ে এসে ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসন কেবল নয়, আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

এ বছরের শুরু থেকেই সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাস (এইচটিএস) সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে বড় হামলা চালিয়ে আসছিল। বছরের শেষভাগে তারা আলেপ্পো দখল করে নিলে তাদের শক্তিশালী অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্ক নিয়ন্ত্রণে নিলে আসাদের পতন ঘটে। তিনি বিমানে করে রাশিয়ায় গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

আসাদের পতনের পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ আল-বশিরকে। তবে সিরিয়ার ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এইচটিএসের আমির ও প্রধান কমান্ডার আহমেদ হুসেইন আল-শারা। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ এইচটিএসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করায় সিরিয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল মসৃণ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

  • রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত

২০২৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও জটিল ও তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২২ সালে রাশিয়াই প্রথম ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রথম বছরেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক সংকট তৈরি হয়। তবে ২০২৩ সালে ইউক্রেনের বাহিনী সফল প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

২০২৪ সালের প্রথম দিকে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেন ও দনবাস অঞ্চলে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে। ইউক্রেনও নতুন সামরিক কৌশল গ্রহণ করেছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছে। অক্টোবরের শুরুর দিকে রাশিয়ার মিত্র দেশ উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য প্রায় ১১ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে।

জাতিসংঘের মাধ্যমে শান্তি আলোচনার চেষ্টা চললেও, যুদ্ধের তীব্রতা কমার লক্ষণ দেখা যায়নি। মানবিক সংকট এবং শরণার্থী সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য।

  • অলিম্পিক ২০২৪

২০২৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। এটি প্যারিসের অষ্টম অলিম্পিক গেমস এবং ফ্রান্সের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক।

চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, সর্বোচ্চসংখ্যক স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পাওয়া দেশটি বরাবরের মতোই যুক্তরাষ্ট্র। ৪০টি স্বর্ণ, ৪৪টি রৌপ্য ও ৪২টি ব্রোঞ্জসহ দেশটির মোট পদক ১২৬টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনও অবশ্য সমান ৪০টি স্বর্ণপদক জিতেছে। তবে তাদের রৌপ্যপদক ২৭টি, ব্রোঞ্জ ২৪টি। সব মিলিয়ে ৯১টি। আর ২০টি স্বর্ণ, ১২টি রৌপ্য ও ১৩টি ব্রোঞ্জ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান।

  • বছর জুড়ে বিপর্যয়

২০২৪ সালে পৃথিবীজুড়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অগ্নিকাণ্ডের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বন্যায় হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে ভুগেছে লাখ লাখ মানুষ। আবার ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের মতো ইউরোপের কিছু অংশে টানা প্রবল বর্ষণ বন্যার কারণ হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষি, অবকাঠামো ও পরিবেশের।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ঘূর্ণিঝড় মিলটনের আঘাত

২০২৪ সালে বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ও আঘাত হেনেছে। বিশেষত ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর তীব্রতা বেড়েছে। ভারতের উপকূলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে যায়। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে হ্যারিকেন ‘মিলটনে’র আঘাতও তীব্র ছিল। সেখানে প্রচুর ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২৪ সালের দাবানলও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অস্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে আনে আগুন। অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে দাবানল অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি পুড়ে যায় এবং অজস্র বন্যপ্রাণী মারা যায়। সাইবেরিয়া ও উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অতিরিক্ত তাপদাহ ও কম আর্দ্রতা কারণে দাবানল আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানব সমাজের জন্য এক গুরুতর সতর্কতা সংকেত, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনই এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির ঘনত্ব ও তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

  • বড় বিমান দুর্ঘটনায় বছর শেষ

২০২৪ সাল শুরু থেকেই বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। ২ জানুয়ারি জাপানের টোকিও বিমানবন্দরে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারবাস রানওয়েতে অবতরণের সময় কোস্টগার্ডের একটি বিমানকে ধাক্কা দেয়। পাঁচজনের প্রাণহানির পাশাপাশি ও ১৭ জন আহত হন ওই দুর্ঘটনায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত প্লেন। ছবি: সংগৃহীত

এরপর একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে এ বছর। শেষ মাস ডিসেম্বরে এসে ঘটে বছরের সবচেয়ে বড় দুটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা। এর মধ্যে ২৫ ডিসেম্বর কাজাখস্তানের আকতাউ শহরে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান জরুরি অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৮ জন নিহত হন। প্রাথমিকভাবে পাখির সঙ্গে ইঞ্জিনের সংঘর্ষের কথা বলা হলেও পরে কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। এ দুর্ঘটনায় বহির্শক্তির সংযোগ রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।

সবশেষ ২৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে জেজু এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রানওয়ের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ১৮১ জন ছিলেন, যার মধ্যে কেবল দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ১৭৯ জনই নিহত হয়েছেন। পাখির আঘাত বা খারাপ আবহাওয়াকে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া বইছে দক্ষিণ কোরিয়ায়।

সারাবাংলা/এনজে/টিআর

ইসরায়েল এইচটিএস ঘূর্ণিঝড় জলবায়ু পরিবর্তন ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদি ফিলিস্তিন বাশার আল আসাদ ভারতের সাধারণ নির্বাচন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ যুদ্ধ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেখ হাসিনার পতন সিরিয়া

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর