টিএসসিতে ফের শেখ হাসিনার ছবি এঁকে জুতা নিক্ষেপ
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪ | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৪১
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মেট্রোরেলের একটি পিলারে পুনরায় আঁকা শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেছে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিএসসিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন স্কুল, কলেজ ও শ্রমজীবী মানুষদের উৎসাহ নিয়ে এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। এর আগে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এই ছবিটি আঁকে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর শেখ হাসিনার ওই ছবিতে লাল ছোপ দিয়ে তাতে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ছবিটি জনতার ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রতীক হয়ে ওঠে। এর আগে গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতিতে শেখ হাসিনার এই ছবিটে মুছে ফেলা হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সেদিন রাতেই শেখ হাসিনার একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন।
পরদিন রোববার ( ২৯ ডিসেম্বর) প্রক্টর অফিস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি প্রক্টরিয়াল টিমের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করছি।’ বিবৃতিতে এই স্তম্ভটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাস্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়।
আজ (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই টিএসসিতে মেট্রোরেলের সেই পিলারের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এই সময় ছাত্রসংগঠনগুলো ভারত যদি বন্ধু হও, হাসিনাকে ফেরত দাও; ভারতের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; পাকিস্তানের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই; হাসিনাকে তুলে আনো, হাসিনার বিচার করো; হাসিনাকে তুলে আনো, হাজার খুনের বিচার করো ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সময় টিএসসিতে শেখ হাসিনার ছবিতে শ্রমজীবী মানুষদের উৎসাহ নিয়ে জুতাও ও ঝাড়ু– নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে।
হাজারীবাগ থেকে আসা রিকশাচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি মনে করে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে লাখ লাখ মানুষের সামনে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের হত্যার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত।’
রিকশা না চালিয়ে দাঁড়িয়ে জুতা মারার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষকে অনেক জ্বালাইছে হাসিনা। অনেক ছাত্রদের হত্যা করছে। এই হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করা আনন্দের। রিকশা তো প্রতিদিনই চালাই একদিন না হয় হাসিনাকে জুতা মারি।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফতর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বলেন, ‘টিএসসিতে হাসিনার এই ছবিতে জুতা নিক্ষেপ, ঝাড়ু পেটা করা এটি হাসিনার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ৫ অগাস্টের আগেও মানুষ এই ছবিতে ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এটি মুছে ফেলা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন মিলে ওই ছবিটি পুনরায় এঁকে সেই আগের মতোই ঘৃণা জানাচ্ছেন।’
গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫ অগাস্টের পর যখন গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে ফেলে যখন ফুল, পাখি, লতা-পাতা আঁকা হচ্ছিল আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি আমাদের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। গ্রাফিতিগুলো স্বৈরাচারের প্রতি আমাদের ক্ষোভের উদ্গীরণ। এই গ্রাফিতিগুলো সংরক্ষণে আমি মনে করি সরকারের উদ্যেগ নেওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলো দেশের প্রতিটি অঞ্চলে স্কুল, কলেজের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা নিজের মত করে এই গ্রাফিতিগুলোর মধ্যে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গ্রাফিতিগুলো ছাত্র-জনতাকে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে। গ্রাফিতিগুলো ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অনেক বড় সম্পদ। অন্তর্বর্তী সরকার হোক বা যেকোনো নির্বাচিত সরকার হোক তাদের উচিত গণঅভ্যুত্থানের এই গ্রাফিতি সংরক্ষণে সরকারি উদ্যেগ নেওয়া।’
এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রতি মানুষের প্রকাশিত ঘৃণা সবসময় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কোনো অপশক্তি মানুষের মনের এই ঘৃণাকে কেড়ে নিতে পারবে না।’
সারাবাংলা/এআইএন