আসাদের পতনে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন গতিশীলতার উদ্ভব
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৪ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৫
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ক্ষমতাচ্যূতির পরে মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন গতিশীলতার পথ উন্মোচন হয়েছে। এই ঘটনা তুরস্কের জন্য বেশ প্রত্যাশার। ইরাকের জন্যও খানিকটা স্বস্তির। কারণ এতে ইরানি চাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশটি।
আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পতন মধ্যপ্রচ্যের রাজনীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন আনছে।
১৯ ডিসেম্বর বৈরুতে অনুষ্ঠিত কার্নেগী মধ্যপ্রাচ্য সেন্টারের একটি ওয়েবিনারে ভাষণ দেওয়ার সময় কার্নেগী ইউরোপের সিনিয়র ফেলো সাইনান আলগেন আসাদ সরকারের এই পতনকে একটি ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আলগেন বলেন, ‘মূলত আমরা সিরিয়ায় এমন একটি সরকারের অভ্যুদয় দেখছি যারা হয়ত ৫০ বছর পরে ইরানপন্থি না হয়ে অনেক বেশি তুরস্কপন্থি হবে। আঞ্চলিক শক্তির সমন্বয়ে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আর সেটিই হচ্ছে আসাদের পতনকে আংকারায় এতটা উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানানোর কারণ।’
পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক ইউরোপীয় কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির উপ-প্রধান এলি জেরানমায়েহ বলেন, ‘সিরিয়ায় ইরানের সম্পদের ওপর এবং প্রতিবেশি লেবাননে ইরানের প্রক্সি হেজবুল্লাহর ওপর ইসরাইলের আক্রমণ ও সেই সঙ্গে খোদ ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলের সামরিক আ্ক্রমণ ইরানের জন্য আঞ্চলিক হিসেব-নিকেষ করার মূহুর্তকে তুলে ধরছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা (ইরান) নিশ্চিতভাবেই পিছিয়ে পড়েছে। এখন তাদের কৌশলগত দিক থেকে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে যে এখান থেকে তাদের অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক নীতি ঠিক কেমন হবে।’
জেরানমায়েহ বলেন, ‘ইরানের আঞ্চলিক মর্যাদা নেমে যাওয়ায় এবং সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনে তাদের তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষ প্রায় ভেঙ্গে পড়ায় শক্তিধর বিপ্লবী গার্ড কোরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন অন্যান্যরা।’
কার্নেগী মধ্যপ্রাচ্য সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো হারিস হাসান বলেন, ‘ইরানের প্রতিরোধ অক্ষের শেষ শক্ত ঘাঁটি হচ্ছে ইরাক। তবে সেটিও বদলে যেতে পারে।’
হাসান বলেন, ‘সুতরাং ইরান সেই প্রভাবটিকে শক্তভাবে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা শক্তির ভারসাম্যে অনেকটা পরিবর্তন দেখছি এবং তেহরান থেকে আসা কিছু চাপ প্রতিহত করতে ইরাকি সরকার অধিকতর স্বাধীনতা অর্জন করেছে।’
হাসান বলেন, সিরিয়ায় সম্ভাব্য ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বে সরকারের বিষয়ে এর প্রতিবেশি রাষ্ট্র সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইরাক নতুন সুবিধা পেতে পারে কারণ সিরিয়ার সঙ্গে দেশটির দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এই দুটি দেশের মধ্যে শক্তিশালী আন্তঃসীমান্ত সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণেই ইরাক, ইরানের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ক্রমশই ইরাকে আঞ্চলিক পরিবর্তন আসছে।’
উল্লেখ্য, আসাদ সরকার দীর্ঘ ৫৪ বছর শাসন করেছে। প্রথমে জ্যেষ্ঠ হাফেজ আল-আসাদ এবং পরে তার ছেলে বাশার আল-আসাদ। তারা ছিলেন মূলত শিয়া গোষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র শাখা আলাওয়াইত সম্প্রদায়ের লোক।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ