জুলাই আন্দোলনের ধাক্কায় জনশক্তি রফতানি ৩১% কমার আশঙ্কা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২২ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৪
ঢাকা: চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে জনসংখ্যা রফতানি ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
শনিবার (২৮ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৪ অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রামরুর ফাইন্ডিং চেয়্যারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দক। রামরুর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মেরিনা সুলতানা এবং সিনিয়র অফিসার পারভেজ আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের কারণে গত জুলাই ও আগস্টে অভিবাসনের গতি ব্যাহত হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। বিদায়ী বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন নারী ও পুরুষ দেশ থেকে কর্মের উদ্দেশে বিদেশে গেছেন। গত ২০২৩ সালে বিদেশগামী অভিবাসী নারী ও পুরুষের মোট সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন। চলতি বছরের ১১ মাসে যে গতিতে মানুষ বিদেশ যাচ্ছেন, এতে পুরো বছরে প্রায় ১০ লাখের মতো হতে পারে। সে হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অভিবাসন সংখ্যা কমতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণের দীর্ঘ সূত্রতা কমানো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তৎপর হওয়ায় অক্টোবর ও নভেম্বরে লক্ষাধিক মানুষ বিদেশ গেছেন।
তবে বিগত সরকারের আমলে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল দুর্নীতি হয়েছে। অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে অভিবাসি কর্মীদের স্মার্ট কার্ড দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ ‘আর্মি প্রবাসী লিমিটেড’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয়। গত সরকারের আইসিটি ডিভিশন এবং ব্র্যাকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদেশগমনকারী অভিবাসীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৩০০ টাকা, স্মার্ট কার্ড ডাউনলোড করার জন্য ১০০ টাকা, স্মার্ট কার্ড সংশোধন বাবদ ২০০ টাকা ফি নেওয়া হতো। বহির্গমন সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ১০০ টাকা, গৃহকর্মীর ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট বাবদ ১০০ টাকা, এনরোলমেন্ট কার্ড গ্রহণের জন্য ১০০ টাকা ও সাধারণ সার্টিফিকেটের জন্য ১০০ টাকা এখনও নেওয়া হচ্ছে। এসব বাবদ চলতি সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি কমপক্ষে ২৬২ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অভিবাসীদের ব্যক্তিগত তথ্য তাদের অনুমতি ছাড়াই প্রাইভেট কোম্পানির কাছে চলে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০০২-০৩ সাল হতে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক বাজেটে অভিবাসন খাতের বরাদ্দ ছিল ০.০৫ হতে ০.১০ শতাংশ। অভিবাসী এবং সিভিল সমাজের আকাঙ্ক্ষা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সকল অভিবাসী এবং তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ করতে অথবা প্রতিবছর অভিবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, এর ৫ শতাংশ সমমানের বরাদ্দ মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানিক পরিচালনা খরচের বাইরে কর্মী ও তার পরিবারের অধিকার রক্ষা এবং সেবায় ব্যবহার করা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার ১৫টি পৃথক কমিশন গঠন করেছে। অভিবাসন প্রতিবছর ২১ বিলিয়ন ডলার দেশে আনলেও এবং ১০ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো কমিশন গঠন করেনি। সিভিল সমাজ মনে করে, অভিবাসন বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করা উচিত।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস