‘মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে ঢাকার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ দরকার’
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১১ | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৩
ঢাকা: পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক অনেক সুবিধা অর্জন করা যেতে পারে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) ‘চীন-দক্ষিণ এশিয়া সভ্যতা ও সংযোগ: ইতিহাস ও সমসাময়িক ইস্যু’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৌহিদ এসব কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন মিয়ানমারের স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা ও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের জন্য বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নির্বিঘ্ন সংযোগ প্রয়োজন এবং এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে কার্যকর রুটটি করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ণ অধিকার ও নিরাপত্তাসহ রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তনসহ আমরা শান্তিপূর্ণ মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করি যাতে আমাদের উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য এই সংযোগ স্থাপন করা যায়।’
পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যা সকল স্টেকহোল্ডারদের উপকার করবে।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সংযোগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তৌহিদ আরও উল্লেখ করেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সংযোগ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের এই যুগে, শুধু কৌশলগত অংশীদার হিসাবেই নয়, বরং বন্ধু হিসাবে চীনের সাথে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রয়াসে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এই উদ্যোগটি অভিন্ন সমৃদ্ধির চেতনা প্রতিফলিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্যোগের অধীনে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য করিডোর ও জনগণের সঙ্গে জনগণের বিনিময় কল্যাণের লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সংহতির আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।’
উপদেষ্টা বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্ব বাড়ানোর তাৎপর্য পুনর্ব্যক্ত করেন, যা এ বছর একটি ‘ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে’ পরিণত হয়েছে। তৌহিদ বলেন, ‘এই নতুন অংশীদারিত্বটি বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠেছে।’
তিনি সমসাময়িক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যেমন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক নানা বৈষম্য সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্বশীল প্রতিবেশী হিসেবে, চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অবশ্যই এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
তৌহিদ বাংলাদেশের রূপান্তরমূলক চেতনার কথা স্বীকার করে দেশের তরুণদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা তুলে করেন। তিনি বলেন, “লক্ষ্য অর্জনের এই নতুন বোধ, যাকে আমরা ‘নতুন বাংলাদেশের’ চেতনা হিসাবে উল্লেখ করছি। এটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও উদ্ভাবনী সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক মঞ্চে আমাদের ভূমিকাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে।”
চীন-সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর সোসিওকালচারাল স্টাডিজ (সিএসসিএসএস) এবং চীনের ইউনান ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরী।
সারাবাংলা/পিটিএম