ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে আতঙ্কে বিদেশি শিক্ষার্থীরা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৩ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫৫
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই অভিবাসন নীতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভয় ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে শিক্ষার্থীদের শীতকালীন ছুটি থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে। বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই যেন তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ইমেল বার্তার মাধ্যমে তাদের বিষয়টি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করবেন ২০ জানুয়ারি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১১ লাখেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নথিভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ট্রাম্প ফিরে এলে আরও কঠোর অভিবাসন নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে তার আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সম্প্রসারণও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়, কিন্তু দেশে থাকার জন্য অনুমতি দেয় না।
রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান চালানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এ কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ অভিযান যদি চলে, তাহলে যারা বেকায়দায় পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হবেন বিদেশি শিক্ষার্থী।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত ভারতের প্রমথ প্রতাপ মিশ্র (২৩) জানান, এটি বিদেশি ছাত্রদের জন্য একটি ভীতিকর সময়। গত বছর নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভারের অধ্যাপক ক্লোই ইস্ট জানিয়েছেন, বিদেশি সব শিক্ষার্থীরা এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে কর্মকর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলছেন, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য তারা বড় ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন। ট্রাম্পের হবু প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা নির্বাসনের তালিকায় অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য বিশাল হোল্ডিং সুবিধা তৈরি করবে।
অভিজ্ঞ অভিবাসন কর্মকর্তা ও ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ‘সীমান্ত জার’ টম হোম্যান বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ভয়ংকর অপরাধী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এমন মানুষজনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ণের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিবেন।
সে হিসাবে শিক্ষার্থীদের খুব একটা ভয় পাওয়ার কথা না বলা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের শীতকালীন ছুটি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস। বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতার থেকেই অফিস অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স সতর্কতা হিসেবে এই পরামর্শটি দিচ্ছে।
ট্রাম্পের ভিসা নীতি
অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতি জানিয়েছেন, তাতে অন্য দেশের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে।
নির্বাচনের শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরিতে ‘ভাগ বসাচ্ছে’।
বস্তুত ভারত-পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত, বিশেষত প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন এবং তারা ‘এইচ-১বি’ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও ‘এইচ-১বি’ ভিসা সংক্রান্ত নিয়মের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন এর বেশ প্রভাবও বিভিন্ন খাতে পড়তে দেখা গিয়েছিল।
এখন দ্বিতীয় মেয়াদেও একই নীতি অব্যাহত রাখতে চান ট্রাম্প। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের নীতি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এবং অপরাধ করেনি— এমন নথিপত্রহীন অভিবাসীদের সুরক্ষায় সহায়তা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্তের দায়িত্ব পাওয়া টম হোম্যান এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের এই নীতি উলটে দেবেন। তিনি আরও বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার ও বিতাড়ন অভিযান চালানোর সময় একটি নিশানাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। তবে শহর-উপশহর জুড়ে গণহারে অভিযান চালানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর