তরুণদের অর্থনীতির নেতৃত্বে আনতে নতুন শিক্ষা উদ্ভাবনের আহ্বান ড. ইউনূসের
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩৪
ঢাকা: ডি-৮ দেশগুলোর তরুণদের অর্থনীতির নেতা হওয়ার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে নতুন ধরনের ‘শিক্ষা’ উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেইসঙ্গে তিনি ডিজিটাল বিপ্লবের পূর্ণ সুবিধা নিয়ে তরুণদের দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফলমুখী সংযোগ গড়ে তোলা ও সমবায়ী শিক্ষা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিশরে রাজধানী কায়রোতে ১১তম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে উদ্যোক্তা ও উচ্চতর শিক্ষার মধ্যে আজকের দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও কাছাকাছি আনতে হবে। তাদের লক্ষ্য হতে হবে এই শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞানের ডি-৮ দেশগুলোর নেতাদের বৈশ্বিক ব্যবসা ও শিল্পের তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারের টিকে থাকা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি এতে ডি-৮ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে বলে, তবে আমাদের তা-ই করা উচিত। ব্যবসাকে শুধু সম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যম হিসেবে না দেখে এটি যেন মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে সেভাবে রূপান্তরিত করতে হবে। তারা একটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে সামাজিক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হবেন।’
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, ডি-৮ দেশগুলো বছরের পর বছর ধরে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে লাখ লাখ লোককে মৌলিক শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এটি কঠিন কাজ। উদাহরণস্বরূপ ‘মানদণ্ডে’ পৌঁছানোর জন্য আমরা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি। কীভাবে কর্মক্ষেত্রে লাখ লাখ যুবককে দক্ষ করা যায় তা নিয়ে আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।’
মৌলিক এআইভিত্তিক সরঞ্জাম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো এখন নাগালের মধ্যে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস ডি-৮ নেতাদের একটি সমবায়ী শিক্ষা এজেন্ডা বিবেচনা করার আহ্বান জানান। যা তাদের জাতীয় অঙ্গীকারের পরিপূরক হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমানের জ্ঞানবিতরণী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর ও ফলমুখী সংযোগ তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে ফলিত বিজ্ঞান শাখার ছেলে-মেয়েদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করায় মনোনিবেশ করতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের দেশগুলোর মহান ঐতিহ্য, প্রজ্ঞা ও কৃতিত্ব রয়েছে। আমাদের দেখতে হবে যে, কীভাবে আমরা সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে নতুন কিছু গড়ে তুলতে পারি। বছরের পর বছর ধরে যে ডিজিটাল বিপ্লব চলছে, আমরা এখনও তার পুরো সুবিধা নিতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেহেতু এআই সুলভ হয়েছে, তাই আসুন আমরা আমাদের উদ্যোক্তা ছেলে-মেয়েদের সুবিধার জন্য এক্ষেত্রে বাধাগুলো মোকাবিলা করতে পারি কি না, তা ভেবে দেখি। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে, আমি আমাদের বিবেচনার জন্য দুটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রস্তাব করতে চাই।’
ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ডি-৮ নেতারা এমন এক সময়ে মিলিত হয়েছেন যখন বিশ্ব অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ করছে, যখন অনেক সুযোগ তাদের ইঙ্গিত করছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘যুব এবং এসএমইকে কেন্দ্র করে সামিটের থিম আমাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যথাযথভাবে অনুরণিত।’
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘ডি-৮ দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও তরুণ জনসংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাদের বয়স মাত্র ২৭ বছর। প্রতিবছর প্রায় আড়াই মিলিয়ন তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষি এখনো সমাজ ও অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সেখানে দেখা গেছে যে, অধিকাংশ ক্ষুদ্র কৃষকের সন্তান তাদের পিতামাতার মতো মাঠে-ঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত চাষাবাদ করতে আগ্রহী নয়।’
প্রফেসর ইউনূস জানান, গ্রামীণ বাংলাদেশে ভ্রমণ, এমনকি এশিয়া, আফ্রিকা এবং আরব বিশ্ব জুড়ে, তিনি দেখেছেন কিভাবে আজকের লাখ লাখ তরুণ চারপাশের সবকিছুতে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনকে দ্রুত গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অথবা নতুন নতুন সুযোগ খুঁজে বের করছে। কয়েক বছর আগেও যা অনেকে অসম্ভব ভেবেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ডি-৮ সরকারগুলোকে স্টার্টআপস-ব্যবসায় অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দেন। এতে তারা যুবকদের মাঝে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেতে পারে।
প্রফেসর ইউনূস দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, বাংলাদেশ এ ধরনের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে এবং ২০২৫ সালে প্রথম মাল্টি-স্টেকহোল্ডারদের সভা আহ্বান করতে প্রস্তুত থাকবে।
অনুষ্ঠানে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ ইএল-সিসি, ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা এবং ডি-৮ মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। [সূত্র: বাসস]
সারাবাংলা/পিটিএম