এসএসসির রুটিন পরিবর্তন ও পাহাড়ের সামাজিক উৎসবে ৫ দিনের ছুটি চায় পিসিপি
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:১৬
রাঙ্গামাটি: পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসবের দিনে এসএসসি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করেন পিসিপির নেতারা।
এ সময় পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা ও রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমাসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগুলোর প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবের দিনে নির্ধারিত এসএসসি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনপূর্বক নতুন রুটিন প্রকাশ এবং উৎসব উদযাপন উপলক্ষে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমার সই করা স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিনে ১৩ ও ১৫ এপ্রিল ২০২৫ এ যথাক্রমে বাংলা ২য় পত্র ও ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মাঝে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে একদিন সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় ছুটি হিসেবে বাংলা নববর্ষকে বিবেচনা করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবাদি ছুটির আওতায় আনা হয়নি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জাতিগুলোর প্রধান সামাজিক উৎসবটির উদ্দেশ্য ও চেতনা এক ও অভিন্ন। বর্ষবিদায় ও বরণসহ এ উৎসবের দিনে পরিবারের লোকজন সবাই একত্রিত হয়ে থাকে এবং সামাজিকভাবে একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে নানাবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক আচার—অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
এছাড়া বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের মাঝে এ উৎসবের ঐতিহ্যগত ও আর্থ—সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। স্মরণাতীত কাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসা এই উৎসবটি জুম্ম জনগোষ্ঠীর জীবন—জীবিকা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অংশ যা তাদের পারস্পরিক ঐক্যতান ও ভ্রাতৃত্ববোধকে একইসূত্রে গেঁথে আবহমানকাল ধরে বহমান রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল (বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে) পর্যন্ত এ উৎসবাদি পালিত হয়ে থাকে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ আছে, এই উৎসব পালনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১২ ও ১৫ এপ্রিল সরকারি ছুটির ঘোষণা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো ছুটির নির্দেশনা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ফলশ্রুতিতে উৎসবের দিনগুলোতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় জুম্ম শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধানতম সামাজিক উৎসবটি পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম শিক্ষার্থীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের প্রধানতম সামাজিক উৎসব পালন করতে পারে সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অনতিবিলম্বে ১৩ এপ্রিল ও ১৫ এপ্রিল পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনপূর্বক এসএসসি পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশ এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
সারাবাংলা/ইআ