সিরিয়ায় কারাবন্দি ১২ বছর, মার্কিন সাংবাদিকের খোঁজ আজও অজানা
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১৫ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১
২০১৩ সালের শুরুর দিকে দামাস্কাসের মায্জেহ এলাকার রাস্তায় ছেড়া এবং ধুলো মাখা পোশাক পরা এক আমেরিকান ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়। সেই ব্যক্তি হলেন অস্টিন টাইস, একজন সাহসী সাংবাদিক এবং প্রাক্তন মেরিন। তিনি ২০১২ সালের আগস্টে সিরিয়ায় সাংবাদিকতা করার সময় বন্দি হন।
টাইস বন্দি ছিলেন দামাস্কাসের একটি স্থানীয় কারাগারে, যেখানে তাকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। তবে অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে তিনি কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হন। যিনি কারাগারে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দি ছিলেন।
কারাগার থেকে পালানোর পর টাইস মায্জেহ এলাকায় কিছু সময় ধরে ঘুরে বেড়ান এবং স্থানীয় একটি পরিচিত সিরিয়ান পরিবারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এই পরিবার তাকে সাহায্য করেছিল, যদিও তার নাম নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা হয়নি। তবে খুব দ্রুত তাকে পুনরায় বন্দি করা হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, পালানোর পর তাকে আসাদ-সমর্থিত বাহিনী ধরে ফেলে। ধারণা করা হয়, পরবর্তী সময়ে তাকে সিরিয়ার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
টাইসের বন্দিত্বের একটি ভিডিও ২০১২ সালের আগস্টে প্রকাশিত হয়েছিল। ভিডিওতে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। তার হাত পিছনে বাঁধা ছিল এবং কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তির দ্বারা পাহারা দেওয়া হচ্ছিল। ভিডিওটি প্রথমে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের দোষারোপ করার জন্য ছড়ানো হয়েছিল, তবে পরে এটি একটি আসাদ-সমর্থিত ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে টাইস আরবি ভাষায় একটি প্রার্থনা পাঠ করেন এবং ইংরেজিতে বলেন, ‘ওহ যীশু, ওহ যীশু।’ এটি ছিল তার বন্দিত্বের একমাত্র দৃশ্যমান প্রমাণ।
টাইসের পরিবার গত ১২ বছর ধরে তার সন্ধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তার মা, ডেবোরা টাইস, বারবার মার্কিন সরকারের প্রতি চাপ দিয়েছেন তার মুক্তির জন্য। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেবোরা বলেন, ‘আমাদের একটি উৎস জানিয়েছে যে অস্টিন ভালো আছেন এবং তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে।’
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা এই দাবিকে সমর্থন করেননি এবং বলেছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই।
সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতি এবং দামাস্কাসে কারাগারগুলোর বন্দিদের মুক্তির পরে টাইসের খোঁজ আবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাজার হাজার বন্দিকে মুক্তি দিলেও, টাইসের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘আমরা তাকে খুঁজে বের করতে এবং তার পরিবারে ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’ তবে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যদি টাইস কোনো কারাগারে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থা বা হামলার সময় কোথাও আটকে পড়েন তবে তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
অস্টিন টাইসের নিখোঁজ হওয়া শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো মার্কিন জাতির জন্য একটি বেদনার বিষয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তার পরিবার এবং সাংবাদিক সমাজ তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি তিনি জীবিত আছেন। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব, তবে এখনও তার বর্তমান অবস্থার সরাসরি প্রমাণ পাইনি।’
এই আশা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, অস্টিন টাইসের ভাগ্য আজও রহস্যের ধোঁয়াশায় আচ্ছাদিত।
সারাবাংলা/এনজে