Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেঁয়াজ-আলুর দাম পড়তির দিকে, এলাচের দরে ঊর্ধ্বগতি

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:২৫ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:২৯

চট্টগ্রামের বাজারে চিনির দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে হাজার টাকা বেড়ে গেছে এলাচের দাম। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাজারে পাইকারি ও খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে। তবে হঠাৎ করে দাম বাড়ছে এলাচের। শাকসবজির দাম পড়তির দিকে আছে। বিশেষ করে আলু ও টমেটোর দাম কমেছে। মাছ-মাংস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দাম এক সপ্তাহে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। বরং চিনির দাম কমেছে। তবে সয়াবিন তেলের বাড়তি দর নিয়ে ক্ষোভ আছে ক্রেতাদের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চৌমুহনীতে কর্ণফুলী মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বাজারে খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। আবার অলিগলিতে ভ্যানে মানভেদে ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে দেশি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের চেয়ে অন্তঃত ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১১০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরায়।

দাম বাড়ানোর পর সয়াবিন তেলের সরবরাহও বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, খোলা সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

পেঁয়াজের আড়তদার খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এ জন্য দাম কমেছে। বাজারে চাহিদাও বেশি ভারতীয় পেঁয়াজের। দেশি পেঁয়াজ এখনো মাঠ থেকে আড়তে আসেনি। সে জন্য এর দাম বেশি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় সংকট হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

কর্ণফুলী মার্কেটের বিক্রেতা মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।’

বাজারে দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ দরে বিক্রি হয়েছে। এসব পণ্যের দাম আগের মতোই আছে।

পাইকারি বাজারে চলতি সপ্তাহে এলাচের দাম কেজিতে অন্তত দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪,২০০ থেকে ৪,৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এলাচ প্রতি কেজি তিন হাজার টাকার মধ্যে ছিল। পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আমদানিকারক দেশে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় এলাচের দামে প্রভাব পড়েছে। খুচরায় এলাচ প্রতিকেজি ৪,৫০০ থেকে ৪,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সবজির সরবরাহও বেড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে সবজির দাম। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

সবজির মধ্যে গত সপ্তাহের চেয়ে নতুন আলুর দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। লাল আলু ৮০ টাকা, সাদা আলু ৮০ টাকা, বগুড়ার আলু ৯০ টাকা ও মুন্সীগঞ্জের আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দাম কেজিতে গত সপ্তাহের চেয়ে অন্তত ২০ টাকা কমেছে। বাজারে ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, লাল টমেটো ১৪০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য সবজির মধ্যে ফুলকপি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মূলার দাম ৫০ টাকার মধ্যে এসেছে। শিমের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা কমে ৮০ টাকায় এসেছে। এ ছাড়া লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর লাউ ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৮০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে গত দুসপ্তাহ ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছিল। খুচরা পর্যায়ে দোকান থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল অনেকটা উধাও হয়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সরকার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেয়। দুই ধরনের সয়াবিন তেলেই লিটারে দাম বেড়েছে ৮ টাকা।

দাম পুনর্নির্ধারণের পর এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা। আগে বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা ও খোলা তেল ১৪৯ টাকায় বিক্রি হতো। দাম পুনর্নির্ধারণের পর অবশ্য বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবারহ স্বাভাবিক হয়েছে এবং সংকট অনেকটাই কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।

সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে তেমন হেরফের হয়নি। ছবি: শ্যামল নন্দী

তবে কর্ণফুলী বাজারে কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারিত হারে থাকলেও খোলা তেলের বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। তেলের দাম এভাবে বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

ক্রেতা বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পাঁচ-সাত বছর আগেও খোলা তেলের এত দাম ছিল না। একসময় আমরা ২৮ টাকা, ৩০ টাকায় কিনেছি। ১০০ গুণ দাম বাড়ে, এখন দেখি এক হাজার গুণ বেড়ে গেছে।’

মুদি দোকানে প্যাকেটজাত চিনি প্রতিকেজি পাঁচ টাকা কমে ১২৫ টাকা ও খোলা চিনি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দুই কেজি প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা, ময়দা ১৫০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

চালের মধ্যে কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২১০০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৫০ থেকে ৩৩০০ টাকা, হাফ সেদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৮০ থেকে ১৭৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আগের সপ্তাহের মতো একই দরে বিক্রি হয়েছে গরু-খাসির মাংসও। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

বাজারে ডিম ও মাংসের দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে। খুচরায় প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাস ধরে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম। এ ছাড়া দেশি মুরগির ডিম ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। কাজির দেউড়ি বাজারে মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাছের দামও অপরিবর্তিত আছে। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আকারভেদে ইলিশের দাম দেড় হাজার থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বাজারদর সাপ্তাহিক বাজারদর

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর