‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে পাগলামি বলা কুসংস্কার ও ভুল ধারণা’
১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১৯ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২১
ঢাকা: দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ভুল ধারণা দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অনেকে এটাকে পাগলামি বলে থাকেন। এটা এখনো কুসংস্কার হয়ে আছে। এ সমস্যা নিরসনে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন।
বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধান। বৈঠকে গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়কারীরা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি এবং সেবার পরিধি বিস্তৃত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য বিষয় উপকমিটির সদস্য রাতুল বলেন, অনেকে চোখ হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে। তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্কটা আগের মতো নেই। তারা মানসিক বিষাদগ্রস্ত। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে, তাদের জীবনের অনেক সময় এখন বাকি। তারা হঠাৎ করে সোসাইটি থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
রাতুল আরও বলেন, আমরা চাই, দেশের প্রতিটি জেলায় তাদের জন্য মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক, যেন তারা বিষাদগ্রস্ত হলে ন্যূনতম চিকিৎসা পায়।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মানসিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামসুল আহসান মাকসুদ জানান, বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আহতদের ৬৫ শতাংশের পিটিএসডি উপসর্গ, ৩০ শতাংশের খুব তীব্র মাত্রার বিষণ্নতা, ৪৩ শতাংশের উদ্বেগ ও ৫০ শতাংশের অনিদ্রাজনিত সমস্যা রয়েছে। কিন্তু মাত্র ৮ শতাংশ মানসিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
ডা. শামসুল বলেন, মূলত চিকিৎসার অনিশ্চয়তা, চাকরি, সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো আহতদের প্রধান উৎকণ্ঠার বিষয়। আগামী দিনের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গেলে পর্যাপ্ত মানসিক সাহায্যর ব্যবস্থা করা জরুরি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুনতাসীর মারুফ জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অভ্যুত্থানে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় পুরুষ রোগীদের জন্য ১০ শয্যার আলাদা ওয়ার্ড ও নারী রোগীদের জন্য ১০ শয্যার আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন অফিস সময়ে অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে বিশেষ কাউন্সেলিং/ সাইকোথেরাপি সেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের (বিএপি) আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আব্দুল মোত্তালিবের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক আলী নাসির খান, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম ওয়ালিউল্লাহ, বিএসএমএমইউ মানসিক রোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাওসার বিপ্লব, স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক শামা মাহরীন ও রাতুল চৌধুরীসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর