সাবেক ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যার ঘটনায় হরতাল ও বিক্ষোভ
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৬
মানিকগঞ্জ: জেলার ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত উপজেলা সদর। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে স্থানীয় লোকজন। শহরের সব ধরনের দোকান বন্ধ রেখে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভসহ ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে কয়েকজনের বাড়িঘরে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের অনেকেই বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
জানা গেছে,উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে মানিকগঞ্জ থেকে ঘিওরে আনার পরপর উপজেলা মোড়ে বিক্ষুদ্ধরা কয়েকটি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেন, অগ্নিসংযোগ ঘটান। এ সময় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘিওর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান খান কুদরত ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার একদিন পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মুলত এর প্রতিবাদেই নিহতের গ্রামের বাড়ি কুস্তা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, উপজেলার কুস্তা সামাজিক কবরস্থানে বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহতের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। জানাযায় জেলা উপজেলা ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দাফনের আগে বিক্ষুব্ধরা উপজেলা সদরের বটতলায় ৪টি বসত বাড়ি ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
জানা গেছে, মো. সোলাইমান, ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার, আরজু বেপারী,মো. রায়হানের বাড়ি এবং মুরাদ হোসেনের ডেকোরেটর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছে। তাছাড়া উপজেলার বটতলা মোড় এলাকার বাসিন্দা আরজু বেপারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলার শিকার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. সোলাইমান মিয়া বলেন, ‘আমার বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে দরজা ভেঙে আসবাবপত্রের পাশাপাশি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা আমার ঘর থেকে লক্ষাধিক নগদ টাকা এবং ৪-৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্য ঘরে পালিয়ে ছিলাম। কমপক্ষে ১০০ জন লোক এই তাণ্ডব চালায়।’ তারা সবাই কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান এই সাবেক এই সেনা সদস্য।
ঘিওর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান মো. সিদ্দিক আলী জানান, খবর পেয়ে আরজু বেপারীর বাড়িতে ঘটনাস্থলে দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে মারাত্নকভাবে আহত হন আরও ৬ জন।
সূত্র মতে, উপজেলার কুস্তা এবং উপজেলা মোড়ের বটতলা এলাকাবাসীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত লাভলু আহমেদ ২০০৩ সালে ঘিওর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পর গত আগস্ট মাসে তিনি দেশে আসেন।
এ বিষয়ে ঘিওর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করেনি। শুনেছি তারা জানাজা শেষে থানায় আসবেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করা হবে। ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িতে আমি গিয়ে পরিদর্শন করে আসছি। হরতালে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউ