পুনর্বহাল চেয়ে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:২৬ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৫৮
ঢাকা: বৈষম্যের শিকার হয়ে সেনা বাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর ৪০০ সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
তারা বলেছেন, আমাদের অন্যায়ভাবে ১৮৫৭ সালের বৃটিশ আমলের আইনের আলোকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের কাছে ইতোমধ্যে আমাদের চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের আহাজারি কেউ শুনছেন না।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নসরুল হামিদ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই হস্তক্ষেপের কামনা করা করেন। এ সময় বৃটিশ আইন সংশোধণের দাবি জানান চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল শামস, মেজর (অব:) শাকিলল, লেফটেন্যান্ট সাইফুল আলম পাইকার (নৌ বাহিনী) মো. নাইমুল ইসলাম সেনা সদস্যসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতন্ত্র ও অভ্যুদয় হয়েছে ফ্যাসিস্ট মুক্ত নতুন স্বাধীন এক বাংলাদেশের। আমরা প্রত্যাশা করছি, আজকের এই গণতন্ত্রের বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী থেকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সহযোদ্ধা প্লাটফর্মের সকল সদস্যদের চাকরিচ্যুত সময় থেকে অদ্যাবধি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং বেতন ভাতাসহ চাকরি পুনর্বহাল করবেন।
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহীনির সদস্যরা একটি স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠ বিচার প্রক্রিয়ায় দাবি জানান এবং পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
১. বৈষম্যমূলক ব্রিটিশ সামরিক আইন ও সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর এ্যাক্ট সংস্কার করতে হবে।
২. স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সামরিক অফিসার দ্বারা কমিশন গঠনের পরিবর্তে, সামরিক অফিসার, বেসামরিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং ভুক্তভোগী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্লাটফর্ম সহযোদ্ধা এর প্রতিনিধি নিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের লক্ষ্যে ভুক্তভোগী সদস্য যাতে করে তার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে তার সুব্যবস্থা প্রদান করতে হবে।
৪. তদন্ত কমিশনের বিচারে যদি প্রমাণিত হয় যে কোনো সামরিক সদস্যকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাহলে ভুক্তভোগী সদস্যকে অদ্যাবধি সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা ও সরকারি সকল সুযোগ সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং তার প্রতি অন্যায় ও অবিচার করার দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. তদন্ত কমিশনের কার্যক্রম গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ও মাননীয় সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী প্রধানের কাছে বিনীত অনুরোধ ও আকুল আবেদন জানাচ্ছি মানবিক দিক বিবেচনা সাপেক্ষে আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে কয়েকশ’ পরিবারের জীবিকা নির্বাহসহ দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত করা হোক।
এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে গত ২৭ জুলাই সুশৃঙ্খলভায়ে নিয়মানুযায়ী তিন দফা দাবি নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা, মাননীয় ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) সদস্যদের চাকরিতে বহাল করাসহ তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘সহযোদ্ধা’র দেওয়া ওই স্মারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাফিজুর রহমান গ্রহণ করেন।
এরপর ফের তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে প্রায় ৩৫০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চাকরিচ্যুতদের তালিকাসহ আরও একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ওই স্মারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব মো. সাব্বির আহমদ উপদেষ্টার পক্ষে গ্রহণ করেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইআ