কমলা চাষে দিলুর ভাগ্য বদল, বছরে আয় কয়েক লাখ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০০ | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০৪
টাঙ্গাইল: চায়না জাতের কমলাসহ মিশ্র ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন টাঙ্গাইলের দেলোয়ার হোসেন দিলু। ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভাগ্য বদলে গেছে তার। ফল বিক্রি করে বছরে আয় তার চার লাখ টাকা। বছর-বছর বাড়ছে তার গাছের সংখ্যা। আগামীতে বাড়বে আয়ও। দিলুর সফলতায় অনেক বেকার যুবক মিশ্র ফল বাগান করার আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর এমন অভিজ্ঞতা আর পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এমন বাগান করার পরিকল্পনা করছেন।
দিলুর পরিকল্পিত ফল বাগানে এবার কমলার বম্পার ফলন হয়েছে। সবুজ পাতার আড়ালে প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো কমলা। পাতার ফাঁকে উঁকি দেওয়া কমলা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, খেলে দিলও জুড়ায়।
কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন দিলু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনি পাঁচগাও গ্রামের সাড়ে ছয় একর জমিতে কমলা, পেয়ারা, মালটাসহ মিশ্র ফলের বাগান গড়েছেন। ফল বাগানের নাম দিয়েছেন ‘দিলু এ্যাগ্রো ফার্ম’। তার এই ফল বাগানে কর্মসংস্থানও হয়েছে কয়েক জনের। তাকে অনুসরণ করে ইতোমধ্যে ১২ জন বেকার যুবক কমলা বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।
চায়না কমলা আবাদ করে হাসি ফুটেছে দিলুর মুখে। আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় ধাপে ধাপে বাগানের পরিধি বাড়িয়েছেন তিনি। এখন ১৪০টি কমলা গাছ রয়েছে তার বাগানে। এছাড়াও দেশিয় জাতের বিভিন্ন ফল গাছে শোভা পাচ্ছে নানান ফল।
এ বছর বাগান থেকে কমপক্ষে ২৬০০ কেজি কমলা উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। ১৫০ টাকা কেজি দরে এর বাজার মূল্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
তার বাগানের চায়না জাতের কমলা খুবই মিষ্টি, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে বেশ। হাটে উঠানোর আগেই বাগানেই বেশির ভাগ কমলা বিক্রি হয়ে যায়। দিলুর ফল বাগানে ঘুরতে ও ছবি তোলতে আসেন অনেকেই।
দিলু জানান, করোনার সময় ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১০০ পেয়ারার গাছ দিয়ে বাগান শুরু করেন। পরে মিশ্র ফল বাগান গড়ার স্বপ্ন দেখেন। অস্তে অস্তে বাগানের আয়তন বাড়ান। রোপন করেন চায়না জাতের কমলা গাছ। এর পর বাড়তে থাকে নানান ফলের গাছ। ২০২২ সাল থেকে আসতে থাকে কমলা। শুরু থেকে বাম্পার ফলন হয়ে আসছে কমলার।
তিনি জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ কেজি কমলা বিক্রি করতে পারছেন তিনি। তার বাগানের কমলা খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় বাগান থেকে ১৫০ টাকা দরে কমলা বিক্রি করছেন।
দিলুর ফল বাগান দেখতে আসা কয়েকজন জানান, কমলার বম্পার ফলন দেখে তারা অবাক হয়েছেন। তারারও এখন বাড়ির পাশে খালি জমিতে ফল বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের প্রত্যাশা ফল বাগান করে তাদের বেকারত্ব দূর হবে।
বাগানে এসে ফরমালিন মুক্ত কমলা কিনে সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাডভোকেট ফাতেমাতোর্জ জহুরা জানান, দার্জেলিংয়ে কমলা বাগান দেখেছেন তিনি। দিলুর কমলা বাগান দার্জেলিংয়ের বাগানকেও হার মানাবে। কমলা যেমন মিষ্টি দেখতেও দারুন। বাংলাদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি, তা এই বাগান দেখেই বোঝা যায়।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা খাতুন জানান, উপজেরা কুষি বিভাগ পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। এবারও কমলার ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, সামনের বছর আরও ফলন বাড়বে। কেউ যদি কমলাসহ অন্যান্য ফল বাগান করতে আগ্রহী হন তাদেরকেও কৃষি বিভাগ থেকে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. সোয়েব মাহমুদ জানান, এ বছর জেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে কমলা এবং ২০০ হেক্টর জমিতে মালটা চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধদপ্তর লেবু জাতীয় উদ্ভিদ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এখন বানিজ্যিকভাবে কমলা ও মালটা চাষ শুরু করছেন। তাদের মধ্যে একজন দেলোয়ার হোসেন দিলু। সাড়ে ছয় একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগানের মধ্যে ১ একর জমিতে চায়না জাতের কমলার চাষ করেছেন। সবাই যদি এভাবে বাণিজ্যিক আকারে মিশ্র ফলের বাগান করতে এগিয়ে আসে তাহলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/এসআর