বিআইডিএস সম্মেলনে বক্তারা
এলডিসি পরবর্তীতে পোশাক রফতানি ১৪% ও আয় ১০.৮% কমার আশঙ্কা
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:০২ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:২৮
ঢাকা : বাংলাদেশের দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত। এলডিসি (স্বল্পোন্নত ) উত্তরণের পর এ খাতটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে সরবরাহ চেইন ঠিক রাখাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। ফলে এ খাতের রফতানি ১৪ শতাংশ কমে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে পোশাক খাতের রফতানি আয় কমতে পারে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ও বিশেজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত এক সেশনে এমন তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেশনে ‘বাংলাদেশের টেকসই আরএমজি বৃদ্ধির জন্য সাপ্লাই চেইন গতিশীলতা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন। এতে আগামী দিনে আরএমজি শিল্পের যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হতে হবে- সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। ইকোনমিক রিসার্সূ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সবচেয়ে বড় উদ্বেগের একটি হলো- বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা হারানো। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ আর বড় বড় উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে যেখানে পোশাক, কাপড় এবং আধা-প্রস্তুত পণ্যের উপর ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপিত হতে পারে। এ সুবিধাগুলোর অবসান এবং এলডিসির জন্য বরাদ্দ বিশেষ নিয়মাবলী হারানোর কারণে আরএমজি খাতের রফতানি আয় প্রায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা ২০৩১ সাল নাগাদ হতে পারে।
গবেষণায় সতর্ক করা হয় যে, উন্নত দেশগুলো শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশের জিডিপিতে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ হ্রাস হতে পারে। আরএমজি খাতের রফতানি প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয় যা বর্তমানে ৮৪ শতাংশ।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণাপত্রে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, আরএমজি কোম্পানিগুলিকে খরচ কমানোর কৌশলের দিকে নজর দিতে হবে। প্রধান খরচ কমানোর ক্ষেত্রগুলো হলো- কাঁচামাল ব্যবস্থাপনা (১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমানো সম্ভব), মজুরি (৯ দশমিক ১৪ শতাংশ কমানো সম্ভব), এবং পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষার খরচ (৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমানো সম্ভব)। পোশাক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করা বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের কাঁচামালের ওপর নির্ভরতার বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, ২১ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেশীয় বাজার থেকে সস্তা এবং ভালো মানের কাঁচামাল সংগ্রহে মনোনিবেশ করেছে। এ ছাড়াও, তারা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই ট্রেড ফেয়ার এবং সরাসরি অর্ডারের মাধ্যমে তাদের বাজারে প্রবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করছে। গবেষণায় পোস্ট- প্রোডাকশন পর্যায়েও বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করো হয়েছে। বিশেষত, শিপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাস্তর অবকাঠামো সমস্যা, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে অদক্ষতা এবং বন্দরের কার্যক্রমে দেরি হওয়ায় বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। চট্টগ্রাম বন্দর, বিশেষত, এশিয়ার সবচেয়ে অকার্যকর কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্দর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সরবরাহ চেইন সমস্যার সমাধান করতে দ্রুত নীতি পরিবর্তন প্রয়োজন। আরএমজি খাতের সকল অংশীজন, সরকার, উৎপাদনকারী এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। যাতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী উন্নত বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। সরকারের উচিত অবকাঠামো উন্নয়ন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, এবং সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। গবেষণাটির ফলাফল বাংলাদেশের আরএমজি খাতের টেকসই এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী এবং টেকসই সরবরাহ চেইন প্রতিষ্ঠার উপর জোড় দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস