মজা করি ফেস্টিভ্যালে মাতল কড়াইল
৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৬ | আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৬
ঢাকা: তিন বছরের যাত্রার প্রতিফলন ঘটছে মজা করি ডিজাইন ফেস্টিভ্যালে। প্রায় অর্ধশত শিল্পীর ৪০টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর পাশাপাশি ১৫টি কর্মশালা ও ১০টি আলোচনাসহ নানা আয়োজন নিয়ে কড়াইলে গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) শুরু হয়েছে এই মজা করি ডিজাইন ফেস্টিভ্যাল। শনিবারও (৭ ডিসেম্বর) দিনভর কড়াইল জুড়ে চলে উৎসব, যা শেষ হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর।
আয়োজনের শুরুর দিন শুক্রবার কড়াইলের প্রথম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, লেক পাড়, রাহাত মাজার, গ্লোরি স্কুল, রিকশা গ্যারেজ, মরিয়ম স্কুল ও পাঠশালা স্কুলে কড়াইলের শিল্পীসহ ঢাকার প্রায় ৫০ জন শিল্পীর কাজ নিয়ে আসর শুরু হয়। এর মধ্যে কড়াইল সিটি অব কালচার প্রোগ্রামের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট গ্রুপ ছিল ৯টি, ‘পাড়া’ লিমিটেডের ওপেন কল থেকে আর্টিস্ট ছিলেন ২৫ জন। শিল্পীরা প্রত্যেকের নিজ নিজ শিল্পকর্ম এই আয়োজনে প্রদর্শন করেন।
রেসিডেন্ট শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন— মনজুর আহমেদ, আড্ডা কালেক্টিভ, রিদওয়ান আহমেদ, নুজহাত জাহান খান, আদিত্য আরজুসহ অন্যরা। ওপেন কল থেকে আসা শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন— সুবর্ণা মোর্শেদা, তারেক হাসান, তানিতা হোসেন, জাকিউল দীপ, শান নেওয়াজ সৈকত, ফাবলিহা আফাফ, রাইয়ান নাসির।
দিনব্যাপী প্রদর্শনীর পাশাপাশি এই আয়োজনে ছিল কারচুপি প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ন্যাচারাল ডায়িং কর্মশালা, ফিল্ম স্ক্রিনিং ডিজাইন এডুকেশনবিষয়ক আলোচনা। ডিজাইন বিষয়ক আলোচনায় অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্বজিৎ গোস্বামী ও ফারজানা ইউসুফ, সঞ্চালনা করেন হাল ফ্যাশন লাইস্টাইল পত্রিকার কনসালট্যান্ট সাইফুর রহমান।
এ ছাড়া কড়াইল রেসডেন্সি প্রোগ্রামের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরেকটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার, যেখানে শিল্পী মনজুর রিয়েল, কড়াইলের ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার আসমা, হাসান, রিয়াদ ও প্রোগ্রামের অন্যতম রেসিডেন্ট গ্রুপ আড্ডা কালকেটিভ অংশ নেয়। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন পাড়া লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা রুহুল আবদিন।
উৎসবের প্রথম দিন বিকেলে কড়াইলের এরশাদ মাঠ, কড়াইলে ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার ও কড়াইলের প্রথম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মাচানের স্টিয়ারিং কমিটি মিলে বক্তব্য রাখে কড়াইলের বাসিন্দাদের সামনে। বক্তারা তাদের তিন বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পাশপাশি কড়াইলবাসীদের আহ্ববান জানান, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আলো জ্বালিয়ে রেখে সবাই মিলে যেন একটু সুন্দর সংস্কৃতির পরিবেশ ধরে রাখে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন পাড়া লিমিটেডের ভিজ্যুয়াল রিসার্চার তারান্নুম নিবিড়। তিনি তাদের শুরুর গল্প তুলে ধরেন। কীভাবে কড়াইলের মানুষ শুরুতেই তাদের আপন করে নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, সেটিও বিস্তারিত বলেন। তারান্নুমও সবার প্রতি আহ্বান জানান, যেন এই যাত্রা দিয়ে কড়াইলের মধ্যে থেকে আরও আরও প্রতিভা বেরিয়ে আসে এবং সংস্কৃতির একটি সুষ্ঠু ধারা বজার থাকে।
সমাপনী বক্তব্যে জার্মান কালচারাল সেন্টারের পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ভার্নার বলেন, এই আয়োজনে দেখে অনেক খুশি লাগছে। সামনে যেন এই ধারা অব্যাহত থাকে, এমনটিই প্রত্যাশা।
শুক্রবারের আয়োজন শেষ হয় মায়ের আঁচল ফাউন্ডেশনের পরিবেশনা ‘নো প্লাস্টিক ফ্যান্টাস্টিক’ দিয়ে। পরদিন শনিবার পুরো দিন চলে প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলচনা, যেগুলো পুরো কড়াইল জুড়ে আয়োজিত হয়। পরে সন্ধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করেন কড়াইলের তরুণরা, যারা কড়াইল সিটি অব কালচারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট অহনের নির্দেশনায় তিন মাসে তিনটি পরিবেশনার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
এরপরই একই প্রোগ্রামের আরেক রেসিডেন্ট আর্টিস্ট শাহীন সাইদুরের নির্দেশনার কড়াইলের কিশোররা পরিবেশনা করেন নাটক ‘ভয়েসেজ আনভেইলড’। সব শেষে মিউজিশিয়ান জ্যাঙ্কির পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের আসর শেষ হয়।
আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর আবার জমবে এই আসর, কড়াইলের একই স্থানগুলোতে। শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, কর্মশালা, আলোচনার পাশাপাশি থাকবে ঘাসফড়িং কয়্যার, স্বয়ম্ভু, বেতাল প্রাচ্যনাট ও তুলকালামের পরিবেশনা।
সারাবাংলা/টিআর