Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এডিস মশা নিধনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২১ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৫৮

বিপিএমসিএ সভায় বক্তারা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নিধনে সাধারণ মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় মশা নিধনের জন্য স্প্রে করা হলেও তুলনামূলকভাবে অনুন্নত ও সাধারণ এলাকাগুলোতে তা করা হয় না বলে অভিযোগ উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায়।

সভায় ডেঙ্গু আর বর্ষাকালীন রোগ নয় উল্লেখ করে এডিস মোকাবিলায় বছরব্যাপী পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে গণসচেতনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে জানানো হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণ এখন আর শীত-গ্রীষ্ম মানছে না। ফলে সবসময়ই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে সারা বছরই কমবেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ না থাকার ফলেও দেশে বছরব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ চলছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিপিএমসির সভাপতি এম এ মুবিন খান। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিক্যাল লক্ষণ ও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি শনাক্ত করার মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলোও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে এবং বছরের শুরু থেকে ৯০ হাজার ৭৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এর প্রতিকার হিসেবে ডা. জাফরউল্লাহ মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাস করাকে জোর দেন। এ জন্য তিনি প্রজনন স্থান নির্মূল, মশা নিরোধক ও জাল ব্যবহারের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

এ মৌসুমে ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে’ মৃত্যুহার বাড়ছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বলেন, সাধারণত দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বর্ষার আগে শুরু হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত মশা শীত-গ্রীষ্ম মানছে না, বছরব্যাপী প্রজনন এবং বংশবিস্তার করছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, জীবনের মূল্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। করোনার মতো মহামারিকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়েছে। অথচ আমরা এত বছরেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ভারতের কলকাতায়ও পরিস্থিতি খারাপ ছিল। কিন্তু তারা তা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। কলকাতা পারলে আমরা কেন পারব না? তাই পরস্পরকে দায়ী না করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের সারা বছরের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিপিএমসিএর সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাহক মশা নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিপিএমসিএ সভাপতি বলেন, পৃথিবীতে যেসব শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, দেখা যায় তারা সারা বছর ধরে নিবিড় নজরদারি চালায়, যেন কোথাও পানি জমে না থাকে। বিশেষ করে পাশের কলকাতা শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতা করপোরেশন সারা বছর ধরেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে।

বিপিএমসিএর সভাপতি এম এ মুবিন খান জানান, জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি এ সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও সচেতনতা বাড়াতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বাজার এলাকাতে পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করা। এ কার্যক্রম সংগঠনটি বছরব্যাপী পালন করার পরিকল্পনা করছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

এডিস মশা বিপিএমসিএ মশা নিধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর