সমস্যা সমাধানে জাতীয় সংলাপের আহ্বান ড. কামালের
৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:২৮ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৮
ঢাকা: অন্তবর্তী সরকারকে সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে যৌক্তিক সময় দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
‘এ বিষয়ে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা প্রয়োজন’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিরাজমান সব সমস্যা সমাধানে গণতন্ত্রমনা সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে জাতীয় সংলাপ জরুরি।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরামের ৭ম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশ তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিগত ১৬ বছর যাবৎ ফ্যাসিস্ট সরকারের বন্দীদশা থেকে জনগণ নতুন করে মুক্তিলাভ করেছে। ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে যে, এই দেশ কোনো স্বৈরশাসকের নয়, এই দেশ জনগণের।
ড. কামাল বলেন, জাতীয় ঐক্য না হওয়ার কারণে দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যাতে দেশ ও জাতির ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখি এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের চেতনায় বৈষম্যমুক্ত এক মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশ গড়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস-এর নেতৃত্বে যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তাদের যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগিতা করা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে তারা অভীষ্ট সংস্কার কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।
ড. কামাল বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের বিরাজমান রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিবিদ, আইনজীবী, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল। গণফোরামের নীতি, আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩১ বছর আগে হাজার হাজার নেতা কর্মী এই দলের পতাকা তলে সমবেত হয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। গণফোরামের জন্মলগ্নে বিরাজমান যেসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য জাতির সামনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল, তা ৩১ বছর পর আরও তীব্র সংকটরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রহীনতা ও জবাবদিহিতাহীন এক স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অবাধে লুটপাট, অর্থ পাচার, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে দেশ শাসনের ফলে সর্বত্র ভয়াবহ সংকট ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে ছাত্র-জনতার এক অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিগত ১৬ বছর যাবৎ ফ্যাসিস্ট সরকারের বন্দীদশা থেকে জনগণ নতুন করে মুক্তিলাভ করেছে। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের জনগণ স্বপ্ন দেখছে এক স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের। কোনো অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র যেন এই রক্তস্নাত বিজয় ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এই অর্জনকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করি, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গণফোরামের নেতা-কর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
গণফেরামের জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশ ও জাতি আজ কঠিন সময় পার করেছে। একটি দুষ্ট চক্র দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। ভারত সরকারও ওই দুষ্ট চক্রকে উস্কানি দিচ্ছে। বর্তমান ভারত সরকার সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে চলছে। ভারতের এই সরকারই সে দেশের গান্ধিকে হত্যা করেছিল।
তিনি বলেন, চিন্ময়কে কেন্দ্র করে ভারত বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে। বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা করেছে। ভারত বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়ে কোন প্রকার কথা বলেনি। তাদের এখন খুবই দরদ চিন্ময়কে নিয়ে।
দলের কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন বলেছেন, অতীতেও এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসেছে। তাদের সময় দেশে লুটতরাজ হয়নি। এই সরকারের ৩ মাসে লুটতরাজ খুন
খুনখারাবিসহ মব জাস্টি হচ্ছে। এখনও লুটতরাজ চলছে। এগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোন রকমেই সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যদি সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে এই সরকারের বিদায় নেওয়া উচিৎ।
গণফেরামের কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুভ্রত চৌধুরী বলেন, ১০০ দিনের অধিক সময় সরকার ক্ষমতায়। সরকারের এখন শুভ হালখাতা করা দরকার। সরকার শুভ হালখাতার আনন্দ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা না দিয়ে সরকার সংবিধান নিয়ে টানাটানি করছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংবিধান নিয়ে বেশী টানাটানি করবেন না। সংবিধান ছুড়ে ফেলতে যাবেন না। সংবিধান সংস্কার করা আপনাদের কাজ নয়। এসব করতে গেলে বিপদ হবে। একাজ থেকে বিরত থেকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত ও চরমোনাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় পদ পজিশন নিয়ে ভাগাভাগি করছে, সেগুলো থামান। অন্যথায় ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে যেমন পালিয়ে থাকতে হচ্ছে, আপনাদেরও সে অবস্থা হতে পারে।
সারাবাংলা/ এএইচএইচ/আরএস