অন্য কাউকে ভাবতে হবে না, আমরাই সংস্কার করব: আমীর খসরু
৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৫ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩০
ঢাকা: এক বছর আগেই বিএনপি রাষ্ট্রসংস্কারের জন্য যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল, জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে সেই আলোকে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও এক বছর আগে ৩১ দফা সংস্কারের কথা তুলে ধরেছি। তার মধ্যে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবকিছু আছে। আগামী দিনে নির্বাচনের পরে যে সরকার হবে, সেটা হবে জাতীয় সরকার। সেই জাতীয় সরকার এই ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। এর জন্য আমরা জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং, সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নেই। সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার কোনো কারণ নাই।’
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরামের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে মনোযোগী হোক— বক্তব্যে এমন আহ্বান তুলে ধরেন আমীর খসরু। বলেন, ‘৩১ দফা সংস্কার এই বাংলাদেশে আমরা বাস্তবায়ন করব। তবে নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐকমত্যের ভিক্তিতে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারসহ যে কয়টি সংস্কার দরকার, সেগুলো করার সময় দিতে আমরা রাজি। সেটা করতে সময় লাগবে না, অতি সত্তর করা যায়। সেই সংস্কার করে অতি সত্তর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন- গণফোরামের সপ্তম কাউন্সিল শুরু
দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করার আকাঙ্ক্ষা থেকে মানুষ জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে সামিল হয়েছিল উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ স্বৈরাচারকে তাড়িয়েছে কিন্তু স্বৈরাচারের দোসররা বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বিভিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো আনসার বিদ্রোহ, কখনো সংখ্যালঘু, কখনো অটোরিকশাচালক— প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। তাই স্বৈরাচারকে সরানোর পরও আমাদের ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে। জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন ঘটনাবলি দেখছেন। যেগুলো ১৫-১৬ বছরে ছিল না, এখন দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন সংস্থা মাঠে নামছে। একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে এসব দাবি-দাওয়ার পেছনে অন্যশক্তি কাজ করছে, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। এই শক্তির উৎস কোথায়, তা জানতে হবে। ইদানীং যে ঘটনাগুলো ঘটছে ধর্মের নামে, আসলে কি ধর্মের নামে? এগুলো বোঝার জন্য আরেকটু গভীরভাবে দেখতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা নেই, সেটা আমি বলব না। কিন্তু সেটাকে যেভাবে দেখিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে, সেটা তো বাংলাদেশ নয়। কলকাতায় বাংলাদেশের দূতাবাস ভাঙছে, পতাকায় আগুন দিচ্ছে, বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তাই আমাদের সাবধান থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। এর মাধ্যমে আগামী বাংলদেশ গড়ার স্বপ্ন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেন আমরা ফিরে যেতে পারি, তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, স্বৈরাচার হঠানোর জন্য যুদ্ধটা ছিল, সেটা আমরা করেছি। এখন সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যেতে হবে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে, শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া এই সরকারের সামনে আর কোনো পথ নেই। তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং আমরা সেটা করে যেতে চাই।’
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিপ্লবী গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণফোরাম নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুসহ অন্যরা। সম্মেলন উদ্বোধন করেন জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে নিহত ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আমীর খসরু আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণফোরাম জাতীয় কাউন্সিল সংস্কার